সারা রাত চোখ দুটির ওপর দিয়ে বেশ ধকল গেছে তা অরণ্যার দিকে তাকালে
স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়ে ধরা দেয়। এক রাতেই চোখের নীচে কালশীটে দাগ পড়ে গেছে।
ফুলে ঢুল হয়ে গেছে চোখের পাতা দুটি। মুখের বিভিন্ন স্থানে কান্নার ছোপ ছোপ
দাগ। মাথার চারপাশে অগুছালো চুল ছড়িয়ে আছে। কাল বিকেলেও এমনটি ছিলনা। অথচ
আজ মনে হচ্ছে, দেবী প্রতিমার স্নিগ্ধ অবয়বে কে যেন বিষাদের কালো কালি মেখে
দিয়েছে।
গতকাল বিকেল থেকেই বারবার অরণ্যার গা গুলাচ্ছিলো। মাথা ঝিম ঝিম করছিলো।
তীক্ষ্ণ ধাতব আওয়াজ যেমন কানের ভিতর আঘাত হানে, মাথার মধ্যে ঠিক তেমনটি
করছিলো। বিকেলে দু-বার প্রায় বমি হতে গিয়েও হয়নি। সন্ধ্যা নামতেই বার কয়েক
বমি হলো। বমির তীব্র গতিবেগে মনে হচ্ছিলো পেটের সমস্ত নাড়িভূড়ি বুঝি ছিড়ে
যাবে। তবে বমি হওয়াতে শরীর বেশ হালকা হয়েছিল। হঠাত করে শরীরের এমন আচরণে সে
নিজেই বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলো। কোন পূর্বাভাস ছাড়াই যেন এক মহা প্রলয় বয়ে
গেল।
মহা প্রলয় থামতেই সে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। চোখ সামান্য বুজে আসতেই মায়ের
ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। চোখ মেলে দেখল, জেসমিন বেশ কঠিন মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন।
রাগে তার চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে। মুখের নীলাভ শিরাগুলো যেন ফর্সা চামড়া ভেদ
করে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তিনি চেহারার ন্যায় বজ্র-কঠিন কন্ঠে বললেন,
‘অরণ্যা, তুমি উঠে বস। তোমার সাথে দুটো কথা আছে।’
অরণ্যা এর আগে মায়ের এমন কঠিন রূপ দেখেনি। চিরকালের স্নিগ্ধ, কোমল মায়ের এ
রকম আচরণে সে আশ্চর্য্য হল, সেই সাথে ভয় ভয় লাগল। সে কী নিজের অজান্তে কোন
অন্যায় করে ফেলেছে? না, শত চেষ্টা করেও মনে করতে পারল না কোন অন্যায় করেছে
কিনা! সে ভয়ে ভয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসতে চাইল কিন্ত ঠিকমতো বসতে পারলনা।
একটু আগে বয়ে যাওয়া ঝড়ে শরীরটা নিস্তেজ হয়ে গেছে। শরীরের শেষ শক্তিকণাগুলো
যেন উদ্বায়ী পদার্থের ন্যায় সরাসরি বাতাসের সাথে মিশে গেছে। কোন রকমে হেলান
দিয়ে বসতেই জেসমিন বললেন, ‘তোমাকে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করবো, তুমি সাফ সাফ
জবাব দিবে।’
অরণ্যা এখনও কিছু বুঝতে পারছেনা। সে ভয়ে ভয়ে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল।
মা মুখটা সামান্য গম্ভীর করে বললেন, ‘তোমার কী হয়েছে? আমাকে খুলে বলো।’
অরণ্যার বুক থেকে একটা চাপা আতংক দীর্ঘশ্বাসের সাথে স্বস্তি হয়ে বেরিয়ে
এলো। এই কথা জিজ্ঞেস করার জন্য এতো কঠিন হওয়ার কি কোন কারণ হয়! সে মুখে
সামান্য হাসি এনে বললো, ‘এই কথা! বাইরে চটপটি আর ফুচকা খেয়েছিলাম হয়তো সে
কারণেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হচ্ছে। এ নিয়ে তুমি কোন চিন্তা করোনা মা।
এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।’
জেসমিন কন্ঠ আরেকটু উচু করে বললেন, ‘হেয়ালী ছাড়ো। সত্যি করে বলো তোমার সমস্যা কি? আমি অন্য কিছুর আভাস পাচ্ছি।’
এবার অরণ্যার মেজাজ সত্যি বিগড়ে গেলো, সেও খানিকটা উচু স্বরে বলল, ‘কি
হয়েছে তোমার! বলছি সামান্য গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, তা নিয়ে এতো মাথা ঘামানোর
কোন কারণ আমি দেখছিনা।’
জেসমিনের গলাটা যেন একটু ধরে এলো। তবুও আগের সেই তীব্রতা বজায় রেখে ধরা
গলাতেই বললেন, ‘তুমি কিছু লুকোনোর চেষ্টা করোনা। আমি যা ধারণা করছি তা
সত্যি হলে সমাজে আর মুখ দেখানো যাবেনা।’
অরণ্যা যেন আকাশ থেকে পড়ল। এসব কথার মানে কি! সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সরাসরি
মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘আশ্চর্য্য! তুমি কি বলতে চাইছো
একটু পরিষ্কার করে বল তো।’
জেসমিন ইতস্তত করে সরাসরি বললেন, ‘আমার ধারণা তুমি প্রেগনেন্ট।’
যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটল। এক ধারালো কুঠার দিয়ে কেউ যেন অরণ্যার মাথা
দ্বিখন্ডিত করে ফেলেছে। সে রাগে ফুসতে ফুসতে বলল, ‘ছি মা! ছি! তোমার
চিন্তা-ভাবনা এতো নীচ! নিজের মেয়েকে তুমি এমন কথা বলতে পারলে! আমার ঘেন্না
হচ্ছে।’
জেসমিন বললেন, ‘ঘেন্না তো হওয়ার কথা আমার। তোমার মতো মেয়ে পেটে ধরেছি বলে লাজে আমার মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে।’
অরণ্যা অশ্রু সজল চোখে বলল, ‘মা! প্লীজ তুমি থাম। এভাবে অন্যায় অপবাদ তুমি আমাকে দিওনা। তোমার কেন মনে হচ্ছে আমি প্রেগনেন্ট?’
জেসমিন কিছুক্ষণ মৌন হয়ে রইলেন। তারপর বললেন, ‘তোমার শারীরিক লক্ষণই বলে
দিচ্ছে তুমি কনসিভ করেছো। কয়েকদিন আগেই তুমি আমাকে জানিয়েছো তোমার পিরিয়ডে
সমস্যা হচ্ছে। আর এর মাঝে তোমার এমন গা গুলানো ভাব, বমি বমি ভাব, শারিরীক
অবসাদ স্পষ্টত সেটাই প্রমাণ করে।’
অরণ্যা ততোক্ষণে পুরোপুরি অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। সে আমতা আমতা করে বলল, ‘এসব
তো খুব স্বাভাবিক মেয়েলী সমস্যা। তাই বলে এ নিয়ে আকাশ-পাতাল ভাবার মানেটা
কি? তাছাড়া বিশ্বাস করো, আমি কোন পাপ কাজ করিনি।’
জেসমিন বললেন, ‘দেখ অরণ্যা, আমি নিজে একজন নারী। নারীত্বের এরকম কিছু
মূহুর্ত্ব আমিও অতিক্রম করে এসেছি। একজন নারীর নিকট এ ব্যাপারগুলো লুকানোর
কোন উপায় নেই।’
অরণ্যা বলে, ‘মা তুমি আমার ওপর বিশ্বাস রাখ।’
‘আমি তোমার ওপর বিশ্বাস রাখতে চাই। আমার অনুমান মিথ্যে হলে আমার চেয়ে খুশী আর কেউ হবেনা।’ রুক্ষ্ণস্বরে জেসমিন কথাগুলো বলেন।
অরণ্যা কোন কথা খুঁজে পায়না। লজ্জ্বায় তার মাথা নিচু হয়ে আসে। মায়ের
দিকে তাঁকাতে সাহস হয়না। অশ্রুসিক্ত চোখ বন্ধ করতেই অক্ষিপটে ভেসে ওঠে একটা
ডিঙ্গি নৌকা। নতুন বাঁশ দিয়ে ডিঙ্গিটার ছই ছাওয়া। সেই নৌকার একপাশের
গলুইয়ে বসে আছে এক জোড়া যুবক-যুবতী। ছোট্ট ডিঙ্গিটা শ্রাবণের প্রবল স্রোতে
আপন গতিতে ঠিকানাবিহীন ছুটে চলেছে। যুবক-যুবতীর সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
যুবকের ভরাট কন্ঠ রবি ঠাকুরের কোন এক রোমান্টিক কবিতা আউরাচ্ছে। আর যুবতী
মুগ্ধ হয়ে সেই ভরাট কন্ঠের মাধুর্য্য শ্রবণ করছে আর মাঝে মাঝে নদীর স্বচ্ছ
নীলাভ জল যুবকের দিকে ছিটিয়ে দিচ্ছে। যুবক এ দুষ্টুমি বেশ উপভোগ করছে।
হঠাত করে আকাশ বেয়ে নেমে এলো বারিধারা। বৃষ্টির পরশ পেয়ে যুবতী যেন নতুন
আনন্দে জেগে উঠল। সে চোখ বন্ধ করে, বিস্তৃত দিগন্তের দিকে দু-হাত প্রসারিত
করে বৃষ্টির শীতল পরশ নিতে লাগল। যুবতীর বৃষ্টিবিলাস যুবক মুগ্ধ নয়নে
অবলোকন করছে। ক্রমে বৃষ্টির বেগ বাড়তেই যুবক-যুবতী ছইয়ের তলায় আশ্রয় নিলো।
বৃষ্টিসিক্ত বসন যুবতীর দেহকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছে। যুবতীর মুখখানা
লজ্জ্বায় কুঁকড়ে আসছিল। সে দু-হাত বুকের কাছে আড়াআড়ি করে নিজেকে আড়াল করার
বৃথা চেষ্টা করল। তারপর গুটিসুটি মেরে আড়ষ্টতার সাথে বসে রইল।
যুবতীর গোলাপী ওষ্ঠে বিন্দু বিন্দু জলকণা চিকচিক করছে। কম্পমান ওষ্ঠদ্বয়
যেন একটুখানি উষ্ণতার অপেক্ষায় রত। যেন সামান্য উষ্ণতা পেলেই যুবতীর সকল
আড়ষ্টতা কেটে যাবে। যুবক এতোক্ষণ চুপচাপ যুবতীকে দেখছিল। কিন্ত যুবতীর
ঠোটের ওপর দীপ্যমান মুক্তোদানার ঔজ্জ্বল্যে সে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাল।
যুবতীকে কোন কিছু ভাবার সুযোগ না দিয়েই যুবক নিজের খয়েরী অধরে জড়িয়ে নিলো
যুবতীর সিক্ত অধর। ঘটনার আকষ্মিকতায় যুবতী বিষ্মিত হয়। কিন্ত সেই বিষ্ময়
বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়না। যুবকের অবিরাম চুম্বনে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। যুবকের
কঠিন অথচ ভালোবাসাময় বেষ্টনীতে আবদ্ধ হয়ে একে-অপরের সাথে লতায়পাতায় মিশে
যায়। এ যেন শরীরের সাথে শরীরের; হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের; এক গভীর আত্মিক বন্ধন।
ঘোর যখন কাটলো তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। ঘটনার আকস্মিকতায় যুবতী স্তম্ভিত
হয়ে গেল। লজ্জ্বা-ঘৃনা-ভয় ধারালো ছুরির ন্যায় যুবতীর অন্তরে আঁচড় কাটতে
লাগল। নৌকার পাটাতনে মুখ লুকিয়ে যুবতী সব লজ্জ্বা ঢাকার চেষ্টা করল। আর
পাটাতনের ফাঁক বেয়ে যুবতীর খানিকটা অশ্রু নদীর জলে গিয়ে মিশল। যুবক পাটাতন
থেকে যুবতীর মুখ তুলে আনলো। যুবতীর চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, ‘কাঁদছো কেন
লক্ষীটি? আমরা কোন অন্যায় করিনি।’
যুবতী তখনও লজ্জ্বা কাটিয়ে উঠতে পারেনা। কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে, ‘এ কী অন্যায় নয়? একটু নিশ্বাস নিয়ে আবার বলে, আমার ভীষণ ভয় করছে।’
যুবক সে রকমই শান্ত স্বরে বলে, ‘না অন্যায় নয়। আমরা একে-অপরকে ভালোবাসি। সে
ভালোবাসার দোহাই দিয়ে বলছি তুমি নির্ভয় থাকো।’ যুবতী কোন কথা খুঁজে পায়না।
সে যুবকের বুকের আড়ালে নিজের মুখ লুকায়।
আর কিছু ভাবতে পারেনা অরণ্যা। অশ্রুজলে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসে। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে অরণ্যা শিউরে উঠল। একরাতেই চেহারাটা এমন
বিধ্বস্ত হয়ে গেছে ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। যদি ঘটনা সত্যি হয়! অরণ্যা আর ভাবতে
পারেনা। সে এলো চুলগুলো কোন রকমে কানের পেছনে সামলে স্বপ্নীলকে ফোন দিলো।
ওপর পাশ থেকে স্বপ্নীলের ভরাট গলা ভেসে আসতেই সে নিজের মনোবল যেন খানিকটা
ফিরে পেল। এ ভরাট কন্ঠের যাদুতেই সে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ভালোবাসার তরীতে
স্বপ্নচারী হয়ে ভাসার সাহস পেয়েছে। এই সুলায়লিত কন্ঠের আহবানে সাড়া দিতে
গিয়েই আজ সে কলংকিনী হওয়ার পথে। তবুও এই কন্ঠের ওপর রাগ করতে পারেনা। এ
কন্ঠ শুনলেই যেন সমস্ত ভয় কেটে যায়, সামনে ভেসে ওঠে নির্ভরতায় ভরপুর একখানা
শান্ত মুখ। চিরচেনা কন্ঠের উত্তর দিতে গিয়েই দেখল লাইন কেটে গেছে।
মেডিক্যাল রিপোর্ট হাতে আসতে বিকেল হয়ে গেল। শেষ বিকেলের রোদ ডায়গনস্টিক
সেন্টারের গ্লাসে বিচ্ছুরিত হয়ে অরণ্যার চোখে এসে পড়ছে। রোদের সোনালী আলো
অরণ্যার মুখে পড়ে চেহারার ম্লান ভাব আরো ফুটিয়ে তুলছে। অরণ্যার মা জেসমিন
এক পাশের সোফায় বসে গম্ভীর দৃষ্টিতে সিসিটিভির দিকে তাকিয়ে আছেন। রিসিপশনে
রিপোর্ট নেয়ার জন্য ডাক দিতেই তিনি এগিয়ে গেলেন। পুরো রিপোর্ট দেখার পর সে
জায়গাতেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তার মুখটা আরো গম্ভীর হয়ে ওঠলো। অরণ্যা
জেসমিনের পেছনে এসে দাঁড়ালো। মৃদু কন্ঠে ডাক দিল, মা।
জেসমিন পেছন ফিরলেন। অরণ্যার দিকে রিপোর্ট এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘দেখলে তো আমি যা আন্দাজ করেছিলাম তাই সত্যি হল।’
অরণ্যা স্তব্ধ হয়ে যায়। এরপর আর কোন কিছু বলার মুখ রইলনা। বারবার নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর জেসমিন বললেন, ‘আমরা তোমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম তুমি তোমার নিজের ভালোমন্দ বুঝতে শিখেছ। কিন্ত এখন দেখছি আমাদের
ধারণা পুরোপুরি ভূল। আমাদের সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তুমি যা করেছ তাতে
সমাজে মান-সম্মান বলে আর কিছু রইলনা। আমি তোমার বাবাকে কি জবাব দেব!’
কথাগুলো শেষ করে জেসমিন চশমা খুললেন। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল আড়াল করতে
চাইলেন।
কিছুক্ষণ থেমে বললেন, ‘এখন তোমার সামনে একটা পথই খোলা আছে।’
অরণ্যা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাঁকায়। তিনি বলেন, ‘তোমার এ ব্যাপারটা তুমি আর
আমি ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কেউ জানেনা। তোমার গর্ভের সন্তানকে গর্ভেই
নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তাহলে বাইরের কাক-পক্ষীও টের
পাবেনা; আর সমাজে আমাদের সম্মানটাও বজায় থাকবে। আমি কথা দিচ্ছি তোমার বাবাও
ঘুণাক্ষরে কিছু জানতে পারবেনা।’
গর্ভের সন্তান গর্ভেই নষ্ট করে দেওয়া কথাটা অরণ্যার কানে প্রবল আঘাত
হানল। তার মনে প্রবল পাপবোধের সৃষ্টি হল। স্বপ্নীলের সাথে বিবাহ বহির্ভূত
সম্পর্কে জড়িয়ে সে পাপ করেছে সত্যি কিন্ত ভ্রুণহত্যার মতো নির্মম ও ঘৃণ্য
পাপ সে কখনও করতে পারবেনা। ভ্রুণহত্যা যে জগতের সকল পাপ, সকল অন্যায়কে
ছাড়িয়ে যায়। এক জোড়া নারী-পুরুষের মূহুর্ত্বের ভূলের জন্য একটি পবিত্র
জীবনকে অংকুরেই বিনষ্ট করে দেওয়াকে অরণ্যা মন থেকে মানতে পারলনা। কিন্ত সে
এতোটাই হতাশ ও বিধ্বস্ত যে মায়ের এ কথার কোন উত্তর দিতে পারলনা। সে
কান্নাভেজা কন্ঠে, ‘আমাকে ভাববার সময় দাও মা।’ বলেই ছুটে বেরিয়ে গেল।
ক্যাফেটেরিয়ার এক কোণে অরণ্যা ও স্বপ্নীল বসে আছে। অরণ্যা মাথা নিচু করে
মৌন হয়ে রয়েছে। স্বপ্নীল অরণ্যাকে গালে আলতো ঠোকা দিয়ে সেই যাদুময় কন্ঠে
জিজ্ঞেস করল, ‘কি হয়েছে মাই ডিয়ার প্রিন্সেস? এতো জরুরী তলব দিয়ে আনালেন আর
এখন আপনি চুপ করে আছেন! এ অধম বান্দা কি কোন গুরুতর কসুর করে ফেলেছে?’
স্বপ্নীলের এ ধরণের তামাশা অরণ্যার ভালো লাগছেনা। সে টেবিল থেকে মাথা তুলে বলল, ‘তোমার সাথে কিছু সিরিয়াস কথা আছে।’
স্বপ্নীল আগের মতোই হেয়ালী করে বলল, ‘কি ব্যাপার, বাসায় বিয়ের আলাপ চলছে নাকি?’
অরণ্যা আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলনা। দুচোখ কান্নায় ভরে ওঠল। স্বপ্নীল অবাক হল। সে কিছু বলার আগেই অরণ্যা বলল, ‘আমি মা হতে চলেছি।’
স্বপ্নীলের কানে যেন বোমা পড়ল। সে চেহারায় বিষ্ময় ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কী?
অরণ্যা মাথা নিচু করেই বলল, ‘আই এম জাস্ট প্রেগনেন্ট।’
স্বপ্নীল চোখ বিস্ফোরিত হল। ‘ইটস ইম্পসিবল। আই কুড নট বিলিভ মাই ইয়ারস!’
অরণ্যা এবার সরাসরি স্বপ্নীলের দিকে তাকাল। স্বপ্নীলের চোখগুলো বিস্ফোরিত।
চেহারায় উতকন্ঠার ছাপ। অরণ্যা নিজেকে সামলে বলল, ‘বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে
কেন!’
স্বপ্নীল বলল, ‘এটা কীভাবে সম্ভব?’
অরণ্যা তাচ্ছ্বিল্যভরে বলল, ‘সেদিন বিকেলের কথা কি ভুলে গেছ?’
স্বপ্নীলকে এবার সত্যি বিধ্বস্ত দেখায়। সে দু-হাতে মাথার চুল টানতে থাকে।
অনেকক্ষণ পরে বলে, ‘দেখ অরণ্যা, আমি কিছু চিন্তা করতে পারছিনা। আমার সবকিছু
গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। তুমি আমাকে কি করতে বলো?’
অরণ্যা সাথে সাথেই জবাব দিলো, ‘এর একটাই সমাধান, আর সেটা বিয়ে।’
স্বপ্নীল ভূত দেখার মতো চমকে উঠল, ‘বিয়ে! অসম্ভব।’
অরণ্যার ঠোটের কোণে বিদ্রুপের হাসি ফুটে ওঠল। ‘বাহ! দারুন! বিয়ের কথা বলতেই মাথায় যেন বাজ পড়ল!’
‘আমাকে বুঝতে চেষ্টা করো অরণ্যা।’
‘আর বুঝাবুঝির কি আছে। অন্যায় আমরা দু-জনে করেছি, তাহলে কলংকের ভাগীদার আমি একা হবো কেন?’
‘আমি স্বীকার করছি দোষটা আমারই বেশী। কিন্ত এ মূহুর্ত্বে বিয়ে করার মতো কোন মানসিকতা আমার নেই।’
‘মানসিকতা নেই কেন?’
‘তুমি বুঝতে চেষ্টা কর। গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লীট হতে এখনও বছর দেড় বাকি। এখন তোমাকে বিয়ে করে আমি খাওয়াব কি?’
‘আমরা দু-জন মিলে যেকোন ভাবে সব চালিয়ে নেব। তুমি না বললে গলায় দড়ি দেয়া
ছাড়া আমার কোন উপায় থাকবেনা।’ কথাগুলো শেষ করেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে
অরণ্যা।
‘বি প্র্যাকটিক্যাল অরণ্যা। আমি কোনভাবেই এখন বিয়ে করতে পারবনা। ক্যারিয়ার
বিল্ড-আপ হওয়ার আগেই বিয়ের মতো গুরু দায়িত্ব নেয়ার জন্য আমি কোনভাবেই
প্রস্তুত নই।’
‘বাহ! তাহলে তোমার রোপনকৃত পাপের বীজ কি আমাকে একাই বয়ে বেড়াতে বল?’
‘আমি সে কথা বলছিনা। বিয়ে না করেও আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে পারি। তুমি
এখনও প্রাইমারী স্টেইজে আছো। এখনই এবরশন করিয়ে নিলে কোন ঝুঁকি থাকবেনা।
তারপর পড়াশোনা শেষ হলে আমরা বিয়ের পিড়িতে বসতে পারি। আমি আশা করছি তুমি
আমার কথা বুঝতে পারছো।’
অরণ্যা বজ্রাহতের ন্যায় ক্ষণকাল চুপ করে রইল। চিরচেনা এ মধুময় ভরাট কন্ঠকে
মনে হলো পৃথিবীর সবচাইতে কর্কশ কন্ঠস্বর। তারপর বলল, ‘আমি কোন অবস্থাতেই
এবরশন করাবোনা। ভ্রুনহত্যার মতো অন্যায় আমি করতে পারবোনা।’
‘আজকাল সবাই এমনটি করছে। তাহলে তোমার সমস্যা কোথায়?’
‘কে করছে, আর কে করছে না, তা আমি জানতে চাইনা। আমি শুধু বলতে চাই, আমার গর্ভে আশ্রিত দেবশিশুকে আমি কোনভাবেই হত্যা করতে পারবোনা।’
‘তাহলে আমার আর বিশেষ কিছু করার নেই। এই পাপকে তুমি কি করবে তুমি সিদ্ধান্ত নাও।’
অরণ্যা প্রায় চিৎকার করে বলল, ‘পাপ! কাকে তুমি পাপ বলছো? আমার গর্ভে এই
পাপের বীজ বপন করেছে কে? নারী বলে কি পুরুষের সকল অন্যায়, সকল পাপ জোর করে
নারীর গায়ে চাপিয়ে দেবে?’
স্বপ্নীল চেয়ার থেকে ওঠে অরণ্যার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘শান্ত হও। আমি যা বলছি তাই করো। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
অরণ্যা কোন কথা বললনা। এক ঝটকায় স্বপ্নীলের হাত সরিয়ে দ্রুত পায়ে ক্যাফেটেরিয়া থেকে বেরিয়ে এলো।
সময়ের হিসেবে চব্বিশ ঘন্টা কিছুই নয়। অথচ এই স্বল্প সময়েই অরণ্যার জীবনে
অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। গ্লাসের স্বচ্ছ পানিতে এক কণা কাদা মিশালে নিমেষেই
যেমন ঘোলা হয়ে যায়, ঠিক তেমনি মুহূর্ত্বের একটা ছোট্ট ভুল অরণ্যার জীবনকেও
ঘোলাটে করে দিয়েছে। স্বপ্নীল এ সন্তানকে কোনভাবেই পৃথিবীর আলো দেখাতে
চায়না। সে স্পষ্ট বলে দিয়েছে বিয়ে করতে পারবেনা। মাও পরিষ্কার বলে দিয়েছেন,
গর্ভের সন্তান নষ্ট না করলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে। অরণ্যা স্থির করতে
পারছেনা সে কী করবে! সে কিছুই চিন্তা করতে পারছেনা। সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।
ভ্রুণহত্যাকে অরণ্যা কোনভাবে মেনে নিতে পারছেনা।
আজ অরণ্যার চারপাশ প্রতিকূল। এই প্রতিকূল পরিবেশে সে কি করবে! অরণ্যা আলতো
করে নিজের পেটে স্পর্শ করল। এমনভাবে হাত ছোঁয়ালো যেন সে শিশুটিকে আদর করছে।
এখনও শিশুটির অস্তিত্ব বুঝা না গেলেও আর কদিন পরেই যখন উদর স্ফিত হবে তখন
সবাই অস্তিত্ব টের পাবে। তখন সবাই ছি ছি রব তুলবে! অরণ্যার মনে হলো এ
পৃথিবীতে সে বড্ড একা। তার অতি কাছের মানুষগুলো হঠাত করেই দূরে সরে গেছে।
পরম নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে ভরসা করে যার তরে নিজের সমস্ত সত্ত্বা সঁপে
দিয়েছিল তারই কারণে আজ সে কলংকিনি।
অরণ্যা মুহূর্ত্বেই সিদ্ধান্ত নিল ভ্রুন যদি হত্যা করতেই হয় তবে সবার আগে
সে নিজেকেই শেষ করে দেবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সে ঘুমের ঔষধগুলো হাতের
মুঠোয় ভরে নিল। একটা একটা করে গুনে দেখল মোট তেরটা ট্যাবলেট। এ
ট্যাবলেটগুলো সে বাবার কাছ থেকে এনে রেখেছিল কিন্তু কখনো দরকার পড়েনি। আজ
যে এমনভাবে কাজে লেগে যাবে তা সে ভাবতেই পারেনি। ঔষধগুলো মুখে পুরার আগে
আরেকবার নিজের পেটে হাত বুলিয়ে নিল। হঠাত করে তার দুচোখ জলে ভরে ওঠল। কাঁপা
হাতে ঔষধগুলো মুখের কাছে নিয়ে এলো। কিন্তু না সে পারলনা, নিজের জীবনের
প্রতি কোন মায়া লাগছেনা, বারবার সেই অনাগত শিশুটির অবয়ব মনে ভেসে ওঠছে।
মুখে দেয়ার ঠিক আগ মূহুর্ত্বে সব ঔষধ মেঝেতে ছুড়ে মারল। নিজের জীবনটাকে
তুচ্ছ মনে হচ্ছে এ শিশুর জীবনের কাছে। একেই কী বলে মায়ের ভালোবাসা! অরণ্যা
তখনই একটা ব্যাগে নিজের কিছু কাপড় আর এটিএম কার্ড গুছিয়ে নিল। এ শিশুকে
বাঁচাতে হলে একটা পথই খোলা আর তা হলো পরিচিত পরিবেশ থেকে আড়াল হয়ে যাওয়া।
তারপর কেটে গেছে পুরো নয়টি মাস। পরিচিত পরিবেশ থেকে এতোটা দূরে সরে
থেকেও অরণ্যা জীবনটা অনেক আনন্দময়। ঢাকার আকাশের নিচে অচেনা পরিবেশে তাকে
খুব বেশী কাঠ-খড় পোহাতে হয়নি। ট্রেনে আসার সময় এক মহিলার সাথে পরিচয়। কথায়
কথায় যখন জানতে পারল ইনি একটি নারী বিষয়ক সংস্থায় কাজ করেন তখন সে তার
নিজের সব কথা খুলে বলেছিল। পড়াশোনা পুরো শেষ করতে না পারলেও এই অসমাপ্ত
শিক্ষাই তাকে পথের ধুলোয় মিশে যেতে দেয়নি। অসমাপ্ত শিক্ষার জোরেই সেই
সংস্থায় অফিস সহকারীর চাকরী পেয়ে গেল। জীবনের এ মূহুর্ত্বে সব জায়গায়
পরিবেশ প্রতিকূল হলেও এই একটা ক্ষেত্রে স্রস্টা তার সহায় ছিলেন।
এই সময়ে একটু একটু করে তার গর্ভে বেড়ে ওঠেছে দেবশিশু। একটু একটু করে উদর
স্ফিত হয়েছে। গর্ভাবস্থায় মেয়েদের পেট বিশ্রী রকমের বড় হয়ে যায়। তাই
প্রেগনেন্ট মহিলাদের স্ফিত পেটকে অরণ্যা সবসময় ঘৃণা করতো, কেমন জানি ভয় ভয়ও
লাগত। মনে পড়ে, ও তখন বেশ ছোট। মায়ের পেটটা অস্বাভাবিক বড় হয়ে গিয়েছিল। তা
দেখে অরণ্যার সে কী কান্না! কাঁদতে কাঁদতে একদিন দাদীকে জিজ্ঞেস করল,
‘দাদী মায়ের পেট এমন বিশ্রী হয়ে গেছে কেন?’
দাদী মৃদু হেসে জবাব দিয়েছিলেন, ‘তোমার মায়ের পেটে তোমার একটা ছোট ভাই আছে।
আর যেহেতু সে এখন এখন একটু একটু করে বড় হচ্ছে তাই এমনটি দেখাচ্ছে।’
অরণ্যা এ কথা শুনে খুশী হতে পারলনা। সে কপট রাগ দেখিয়ে বলল, ‘তাহলে ভাইটি
বড় পচা!’ অরণ্যার শিশু মন এ অবস্থা কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি। সে মাকে
সবসময় এড়িয়ে চলত আর ভাইটিকে বকা দিত।
তারপর একদিন যখন ভাইটি হল, তখন অরণ্যা কাছে গিয়ে দেখল, ভাইটি কাঁদেনা,
নড়াছড়া করেনা। বাবা, মা, দাদী, নানী সবাই কাঁদছে। অরণ্যা মনে মনে খুশী হল।
ভাইটি উচিত শিক্ষা পেয়েছে! বড় হয়ে যখন বুঝল তখন ওর খুব খারাপ লাগত। অরণ্যার
মনে হতো ওর কারনেই ভাইটি মারা গেছে।
আজকাল পেটের মধ্যে দেবশিশুর অস্তিত্ব ভালোভাবেই অনুভব করা যায়। রাগ করে
মাঝে মাঝে এমন লাথি দেয় মনে হয়, পেটের মধ্যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার
উত্তেজনাকর ফুটবল ম্যাচ শুরু হয়ে গেছে। এই নতুন পরিবেশে কেউ তার সন্তানের
পিতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেনা। অনেকেই সন্তানের বাবা কোথায় জানতে
চেয়েছে। সে যে কুমারী মা একথা বলার সাহস তার হয়নি পাছে আবার কলংকের বোঝা
চেপে বসে। সে বুকে পাথর চাপা দিয়ে সবাইকে বলেছে এই সন্তানের বাবা মারা
গেছে। এই সময়ে সে একটিবারও বাসার কোন খোঁজ নেয়নি। বাবা-মার কথা মনে হতে
অনেকবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করেছে কিন্তু ফিরে যেতে পারেনি। বাবা-মা যখন দেখবে
সে স্বপ্নীলের সাথে পালিয়ে যায়নি তখন নিশ্চয় ভাববে সে আত্মহত্যা করেছে।
স্বপ্নীলও তাই ভাববে। এইটেই ভাল।
চারতলা দালানের এই মেসবাড়ি শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য। এখানে ছেলেদের
প্রবেশাধীকার নিষিদ্ধ। মেয়েদের জন্য এটি বেশ নিরাপদ আবাস। ছাত্রী থেকে শুরু
করে বিভিন্ন পেশার মহিলা এখানে থাকছে। দুতলায় সিড়ির সাথে লাগোয়া একটি রুমে
অরণ্যা থাকে। আজ সকাল থেকেই তার রুমে ভিড় জমেছে। প্রত্যেক তলার মেয়েরা তার
রুমে এসে জমা হয়েছে। সে সবাইকে দেখছে কিন্ত কাউকে বসার কথা বলতে পারছেনা।
সে বিছানাতে প্রসব বেদনায় কাতর। মাথার কাছে মেসের হোস্টেস বসে আছেন। তিনি
মাথায় হাত বুলাচ্ছেন আর বলছেন, ‘চিন্তা করোনা মা। আমরা সবাই আছি।’
বিছানার পাশে বসে আছেন মেসের আরেকজন সদস্যা, যিনি একটি প্রাইভেট মেডিকেলের
ডাক্তার। তিনি স্নেহের সুরে অরণ্যাকে বললেন, ‘একটু সহ্য করো।’ বলেই দু-জন
ছাড়া আর সবাইকে রুম থেকে বের করে দিলেন।
সমস্ত পৃথিবী যেন অন্ধকার হয়ে এসেছে। চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসছে। অসহ্য
ব্যথায় অরণ্যা কাতরাচ্ছে। মাতৃত্বের এই অসহ্য যন্ত্রণা যে কতোটা ভয়ানক তা
মা মাত্রই জানে। একজন মা কতোটা যুদ্ধ করে তার সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসেন
অথচ সন্তান বড় হয়ে সে মার মনে কষ্ট দিতে একটুও দ্বিধা করেনা। অনেকদিন পরে
মায়ের কথা মনে হল অরণ্যার। সে নিজেও তো মায়ের মনে কষ্ট দিয়েছে। মাকে দেখার
ভীষন ইচ্ছে হল। অরণ্যার মনে হচ্ছে, এই শিশুকে জন্ম দিতে গিয়েই সে মারা
যাবে। এ অবস্থাতেই সে স্রস্টার কাছে আকুতি জানাল, হে স্রস্টা, আমি মারা
যাওয়ার আগে অন্তত একবার আমার সন্তানকে দেখতে দিও।
যুদ্ধ বুঝি একেই বলে। ভরা ময়দানে অজস্র সৈন্যের মাঝখানে একটি শিশু দাঁড়িয়ে
আছে। তাকে উদ্ধার করতে পারে একমাত্র শিশুটির মা। তাকে একাকী ঐ যুদ্ধে
অবর্তীণ হতে হবে। নিজের প্রাণ গেলেও সেই দূর্ভেদ্য ব্যুহ ভেদ করে শিশুটিকে
নিয়ে আসতেই হবে। এই কঠিন যুদ্ধে অরণ্যা জয়ী। মাত্রই সে যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে
ফিরে এসেছে। পৃথিবীর বুকে নিয়ে এল তার অন্তরাত্মাকে। অরণ্যা পাশ ফিরে
দেবশিশুর পানে তাঁকাল। মা ও শিশু দুজনের চোখেই যুদ্ধ জয়ের হাসি। যুদ্ধ জয়ের
এই স্নিগ্ধ, পবিত্র হাসি বুঝি সম্রাট আলেকজান্ডার সারা পৃথিবী জয় করেও
হাসতে পারেননি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার গঠনমূলক মন্তব্য ও সমালোচনা আমার লেখনীকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে। দয়া করে অশালীন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।