বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছের শাখা-প্রশাখার ফাঁকফোকর দিয়ে বাড়িটির অবয়ব যতটুকু দেখা যায় তাতেই যে কেউ বিমোহিত হবে। কোন এক অদৃশ্য ভালোলাগা আর ভালোবাসার আবেশে মনটা ছুঁয়ে যায়। আশপাশের পুরনো সব বাড়িই আধুনিকতার দুঃসহ চাপে বিলীন হয়ে গেছে। অথচ সব বাধাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দু-তলা দালানের এ বাড়ি এখনো আপন মহিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। আধুনিকতার সব উপাদানকে তাচ্ছ্বিল্য করে আপন গাম্ভির্য্য ও আভিজাত্যে বাড়িটি আজও মোহনীয়। সুন্দর কারুকার্যমন্ডিত নকশা আঁকা প্রধান ফটক দেখলেই এর সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা পাওয়া যায়।
প্রায় তিন যুগ ধরে এ বাড়ির প্রধান কর্তা ত্রৈলোক্য চৌধুরী। দুই সন্তানের জনক চৌধুরীর স্ত্রী গত হয়েছেন বছর পাঁচেক আগে। আত্নীয়-স্বজনদের অধিকাংশই পচাত্তর পরবর্তী সময়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর সাথে সাথে তারা নিজেদের জীবনকেও বিপন্নবোধ করেছিলেন,
এদেশে থাকতে ভরসা পাননি। শেখ সাহেব যাওয়ার সময় তাদের সব ভরসা যেন সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। ত্রৈলোক্যেরর ছোট ভাই দুটোও মাকে নিয়ে কলকাতায় পাড়ি জমালো। কিন্তু ত্রৈলোক্য বাপ-দাদার ভিটে মাটির মায়া ছাড়তে পারলেন না। তিনি এবং তার স্ত্রী রয়ে গেলেন পূর্ব পুরুষদের জমিদারীর শেষ চিহ্ন আগলে রাখতে।
ইস্পাত কঠিন মনোবলের অধিকারী ত্রৈলোক্য বাবুর শৈশব,
কৈশোর,
যৌবনের প্রায় পুরোটা সময় কেটেছে এ বাড়ির আঙ্গিনায়। আজ পঁয়ষট্টি বছর বয়সে এসেও সেই মায়া কাটাতে পারেননি। বরং সেই মায়া আরো গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়েছে। আত্নীয়-স্বজনদের অনেকেই ভারতে চলে যাওয়ার তাগিদ দেন কিন্তু তিনি তার অনড় সিদ্ধান্ত থেকে একটুও নড়েননা।
ত্রৈলোক্য বাবু শারিরীক সমস্যাজনিত কারণে রিটায়ার্ড পিরিয়ডের অনেক আগেই চাকরি থেকে অবসর নেন। এল.জি.ডি.ই ডিপার্টমেন্টের মত সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেও সারাজীবন সৎভাবে জীবন অতিবাহিত করেছেন। প্রভিডেন্ট ফান্ড আর পৈত্রিক দোকানগুলো থেকে প্রাপ্ত টাকায় বর্তমানে দিনকাল ভালোই চলে যাচ্ছে। ছেলে অভিজিত কানাডায় একটি আইটি কোম্পানীতে চাকরী করে। মেয়ে দিপান্বিতা অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে গিয়ে সেখানে নিজের পছন্দে সাদা চামড়ার এক অস্ট্রেলীয়কে বিয়ে করে ঘরকন্যা করছে। ছেলে-মেয়ে দুজনই প্রতিদিন নিয়ম করে ত্রৈলোক্যে বাবুকে ফোন করে। দিপান্বিতা প্রতিদিন সকাল আর রাতে ফোন করে ত্রৈলোক্যকে ওষুধ খাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দিপান্বিতা ফোন করলেই ত্রৈলোক্যকে অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসার তাগিদ দেয়। ত্রৈলোক্য কৌশলে সেটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। দিপান্বিতা রাগ করে। ওর মেয়ে জিনিয়া প্রায়ই ত্রৈলোক্যের সাথে কথা বলে। অস্ট্রেলীয় একসেন্টে উচ্চারিত ইংরেজীর সব তিনি ঠিকঠাক বুঝতেও পারেন না। অভিজিত আর দিপান্বিতা দুজনেই তাদের মায়ের মৃত্যুর পর পাঁচ বছর আগে দেশে এসেছিল। এরপর ওরাও আসেনি, ত্রৈলোক্যও কোন তাগাদা দেননি।
ত্রৈলোক্য বাবুর দিনের বেশীর ভাগ সময় কাটে উত্তরদিকের ঝুল-বারান্দায় ইজি চেয়ারে শুয়ে বসে। এ সময়টাতে তার একমাত্র সঙ্গী দৈনিক ইত্তেফাক আর দৈনিক প্রথম আলো। যৌবনে ইত্তেফাকের প্রতি তার যে ভালোবাসা জন্মেছিল সেই ভালোবাসা এখনও রয়ে গেছে। পত্রিকা ছাড়াও আছে কয়েকটি বিশাল আলমিরা ভর্তি বই। পড়া বইগুলো ঘুরেফিরে পড়তে ভালোই লাগে তার। প্রতিদিন সন্ধ্যায় অভিজিতের ছেলে প্রান্তের সাথে টেলিফোনে অনেকক্ষণ কথা বলেন। নাতির আধো মুখের বুলি শুনতে তার বেশ ভাল লাগে। পুরো কথা জুড়েই থাকে বাবা-মায়ের প্রতি প্রান্তের অভিযোগ। ত্রৈলোক্য শুনেন আর হাসেন।
পুরনো বন্ধু-বান্ধবদের প্রায় সকলেই এই পাড়া থেকে উঠে গেছে। যে দু-একজন এখনও রয়ে গেছে তারাও জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে অবিরাম দুলছে। পাড়ায় নতুন যারা এসেছে তাদের সাথে তার খুব একটা খাতির নেই। বাড়িতে তার দেখাশোনার জন্য একমাত্র রয়েছে রমেশ। বাজার-হাট সব রমেশই করে। তিনি শুধু মাসের প্রথমে কাজীর হাটের ভাড়া দেয়া দোকানগুলো হতে ভাড়া তুলে আনেন।
কাজীর হাটে যাওয়ার পথে এ পাড়ার ঠিক উলটো দিকে বড় রাস্তা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকা বয়েজ স্কুলের দিকে চোখ পড়লেই মনটা কেমন জানি করে ওঠে ত্রৈলোক্যের। এই স্কুলে তার কত মজার স্মৃতি রয়েছে। সহপাঠিরা তাকে ত্রৈলোক্যের বদলে তেরলক্ষ বলে ভীষন খেপাত। প্রায়ই তিনি রেগে যেতেন আর সহপাঠিদের পিঠে দু-তিন ঘা বসিয়ে দিতেন। একবার তো জমসেদকে এমন ঘুসি দিয়েছিলেন যে বেচারার নাক দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়েছিল। তারপর হেডস্যার এসে যা পিটুনি দিয়েছিলেন তা ভাবলে এখনও গা শিউরে ওঠে ত্রৈলোক্যের। আজ এত বছর পর সেইসব কথা মনে পড়লে মনটা শূন্যতার অদৃশ্য প্রলেপে ঢাকা পড়ে।
এই বিশাল বাড়িতে দুটো জিনিসকে ত্রৈলোক্যের খুব বেশী আপন মনে হয়। একটি সামনের উঠোনের সুউচ্চ কৃষ্ণচূড়া গাছ আর আরেকটি পেছনের বিরাটকার পুকুর। এ দুটোর প্রতি তার মনের মধ্যে অন্যরকম ভালোবাসা, অন্যরকম টান। সবাই তাকে ছেড়ে দূরে সরে গেছে কিন্তু এ দুটো এখনও তার সঙ্গী হয়ে রয়েছে। কৃষ্ণচূড়া আর পুকুরের দিকে চোখ পড়লেই তার শৈশব স্মৃতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। শৈশবের সেই দিনগুলোতে কত সাঁতরেছেন এ পুকুরে। কতবার যে কৃষ্ণচূড়ার গাছের শীর্ষতে আরোহন করেছেন তার ইয়ত্তা নেই।
একবার তো পুকুরে সাঁতরাতে গিয়ে প্রায় ডুবে যাচ্ছিলেন। একগলা পানি খেয়ে যখন একটু একটু করে নিচের দিকে তলিয়ে যাচ্ছেন ঠিক তখনই পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন বিনুদি। ত্রৈলোক্যকে পাঁজাকোলা করে তুলে আনেন ঘাটে। বিনুদির জলপাই রঙের শাড়িটা কাদা-জলে ভিজে তার শরীরের সাথে লেপ্টে গিয়েছিল। পানি থেকে তুলে আনার সময় বিনুদির কোমল স্পর্শে ত্রৈলোক্য ভীষন রোমাঞ্চিত বোধ করছিলেন। বিনুদির অলক্ষ্যে বিনুদির ভেজা নরম বুকে মুখ গুটিয়ে ত্রৈলোক্য উম নেয়ার চেষ্টা করছিলেন। ওই সময় ত্রৈলোক্যের মনে হচ্ছিলো পৃথিবীর সব উষ্ণতা, সব ভালোবাসা, সব নির্ভরতা এই সিক্ত মানবীর কোমল বুকে লুকিয়ে রয়েছে। পাড়ে উঠিয়ে বিনুদি ত্রৈলোক্যকে ভীষন বকা দিয়েছিলেন। সেই বকুনী ত্রৈলোক্যের কানে অমীয় সুধার মত বাজছিল। বিনুদি সে দিন তার মমতা আর স্নিগ্ধতা দিয়ে চৌদ্দ বছর বয়সের এক বালকের হৃদয়ে এক অনন্য স্থান অর্জন করেছিলেন।
ত্রৈলোক্যের চেয়ে সাড়ে তিন বছরের বড় বিনুদি ছিলেন সাদামাটা অথচ অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তার মুখাবয়ব বিশেষ করে চোখের মধ্যে এমন এক মাধুর্য্য ছিল যা সহজেই যে কাউকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। তার স্নেহময়ী আচরণের কাছে ত্রৈলোক্য সম্পূর্ণ ধরাশায়ী হয়েছিলেন। বয়সের ফারাক থাকা সত্ত্বেও ত্রৈলোক্য বিনুদির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। তখন বিনুদি পড়তেন উচ্চমাধ্যমিকে আর ত্রৈলোক্য মাত্র ক্লাস এইটে। বিনুদি যখন চুলে রঙ্গীন ফিতে বেঁধে বেণী দুলিয়ে কলেজে যেতেন তখন ত্রৈলোক্য এতোটাই মুগ্ধ হয়ে দেখতেন যে তখন তাদের দুজনের মধ্যকার বয়সের পার্থক্য মনেই থাকতোনা।
বিনুদির হাসি-খুশী প্রাণচাঞ্চল্য ভরা মুখ দেখতে ত্রৈলোক্যের ভীষন ভালো লাগতো। মাসের তিন-চারদিন বিনুদিকে খানিকটা বিষন্ন আর অবসাদগ্রস্থ দেখাতো। এই কয়েকটা দিন বিনুদি নিজেকে খানিকটা আড়াল করে রাখতেন। অন্যান্য সময় মাকে রান্নাঘরে সাহায্য করলেও এই ক’টা দিন তিনি সেসব থেকে দূরে থাকতেন। তখন ত্রৈলোক্যেরও ভীষন মন খারাপ হয়ে যেতো। বেশ কয়েকবার তিনি বিনুদিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই দিদি তোর কি হয়েছে? কিন্তু প্রতিবারই বিনুদি লাজুক মুখে তা এড়িয়ে গেছে। এই বয়সে এসে এসব মনে পড়লে ত্রৈলোক্য লজ্জ্বিতবোধ করেন, তিনি শুধু শুধু বিনুদিকে অস্বস্তিতে ফেলে দিতেন।
পৌষ সংক্রান্তির সময় মেশোমশাই যখন বিনুদিকে বাড়ি নিয়ে যেতেন তখন ভীষন মন খারাপ হত ত্রৈলোক্যের। মেশোমশায় এর উপর খুব রাগ হতো। মেশোমশায়ের ওপর তার খুব রাগ হতো। সন্ধ্যায় পড়তে বসে গণিত খাতায় সম্পাদ্য আঁকার বদলে তিনি দস্যু মেসোমশায়ের ছবি এঁকে খাতা ভরিয়ে ফেলতেন।
কিন্তু সেই বিনুদি যখন কমলদার হাত ধরে এক লক্ষীপুজোর সন্ধ্যায় অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন তখন ত্রৈলোক্য ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন। এক আকাশ শ্রাবণধারা অঝোরে নেমেছিল তার দু-চোখ বেয়ে। তার হৃদয়ের কথা ব্যক্ত করার কোন সুযোগই দিলেন না বিনুদি। এর অনেকদিন পর তিনি খবর পেয়েছিলেন, এক ফাল্গুনী পূর্ণিমার রাতে বিনুদি গলায় দড়ি দিয়ে আত্নহত্যা করেছেন। বিনুদির মৃত্যুর খবর শুনে ত্রৈলোক্য ভীষন ব্যথিত হয়েছিলেন। সেই থেকে এখনও প্রতি ফাল্গুনী পূর্ণিমার রাতে বিনুদির প্রতি ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ বাড়ির পেছনের পুকুরে কৃষ্ণচূড়ার পাঁপড়ি ভাসিয়ে দেন।
বিনুদি ছাড়াও আরেকজনের প্রেমে পড়েছিলেন ত্রৈলোক্যবাবু। মুক্তিযুদ্ধের বছর তিনেক আগে কলকাতা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পূর্বপাকিস্তানে ফিরে এলেন ত্রৈলোক্য। বড় পিসি কিছুতেই আসতে দিচ্ছিলেন না। কিন্তু ত্রৈলোক্য জেদ ধরলেন তিনি দেশে এসেই বাকি পড়াশোনা করবেন। শেষ পর্যন্ত বড়পিসি তাকে পূর্ববঙ্গে পাঠাতে বাধ্য হলেন। কলকাতা থেকে ফিরে বাড়িতে ঢুকার পথেই দেখতে পেলেন,
কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে সদ্য কৈশোর পেরুনো এক যুবতী ফুল কুড়োচ্ছে। উঠোন ধরে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরতেই মেয়েটির সাথে ত্রৈলোক্যের চোখাচোখি হলো। মেয়েটা লাজুক ভঙ্গিতে চোখ সরিয়ে নিল। ক্রমাগত যৌবনের পথে অগ্রসরমান এই তরুণীর দৃষ্টিবাণে ত্রৈলোক্য বিদ্ধ হলেন। এক অদ্ভুত ভাললাগা কাজ করছিল তার মধ্যে। পরে তিনি জানতে পেরেছিলেন এই তরুণী তার ছোট কাকীর বোনের মেয়ে।
ত্রৈলোক্য ও কাজলরেখার মধ্যে ভাব জমতে খুব একটা সময় লাগেনি। তাদের মধ্যে অনেক ভাল বন্ধুত্ব তৈরী হয়ে গিয়েছিল। কাজলরেখা যে কয়দিন এ বাড়িতে ছিল খুব ভাল সময় কেটেছিল ত্রৈলোক্যের। যেদিন কাজলরেখা তার বাবার সাথে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল সেদিন কাজলরেখা খুব কাঁদছিল আর বারবার ত্রৈলোক্যের দিকে তাকাচ্ছিল। কাজলরেখার চোখের জল ত্রৈলোক্যের হৃদয়েও দোলা দিলো। বিনুদির পর এই প্রথম কোন মেয়ের প্রতি তিনি নিজের মধ্যে ভাললাগার আবেশ অনুভব করছিলেন।
কাজলরেখা চলে যাওয়ার পরও অনেকদিন পর্যন্ত তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। তারা উভয়েই চিঠির মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতেন। প্রতি বসন্তে ত্রৈলোক্য রঙ্গীন খাম ভরে পাঠাতেন কৃষ্ণচূড়ার শুকনো পাঁপড়ি। আর ফিরতি চিঠিতে কাজলরেখা হৃদয় নিংড়ানো আবেগ আর ভালবাসা দিয়ে লিখত মনের ভাললাগা। এমনি এক বসন্তে পাঠানো চিঠির কোন জবাব এলোনা। এর কিছুদিন পর ত্রৈলোক্য জানতে পারলেন এক মস্তবড় ব্যবসায়ীর সাথে কাজলরেখার বিয়ে হয়ে গেছে। ত্রৈলোক্যের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তার জীবনের দুটো ভাললাগাই এভাবে দূরে হারিয়ে গিয়েছিল হঠাৎ করে।
পঁচাত্তরের এপ্রিলে ত্রৈলোক্যের বাবা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বড় ছেলের বউ দেখে যাবেন বলে শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। বাবার শেষ ইচ্ছা রক্ষা করতে একান্ত অনিচ্ছ্বা সত্ত্বেও ত্রৈলোক্যকে পিড়িতে বসতে হলো। তড়িঘড়ি করে মাত্র দুদিনে সব বন্দোবস্ত করা হলো।
বাসর রাতে বাইরে উত্তাল হাওয়া বইছিল। হাওয়ার ভাবগতিকে মনে হচ্ছিলো আজ একটা হ্যাস্তন্যাস্ত করেই সে থামবে। সে রাতে নতুন বউয়ের ঘোমটা সরিয়ে ত্রৈলোক্য প্রথম কথাটি বলেছিলেন, এ বাড়িতে তোমার একটা সতীন আছে। বিয়ের প্রথম রাতেই স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে জয়িতা আৎকে উঠেছিলেন। আবছা আলোতেও বোঝা যাচ্ছিল নববধুর চোখ দুটি ছলছল করছে। ত্রৈলোক্য জানালার পর্দা সরিয়ে ঈশারায় দূরের কৃষ্ণচূড়া গাছটিকে দেখালেন। কালবৈশাখীর উম্মাতাল হাওয়ায় তখন কৃষ্ণচূড়া গাছটি ভীষন নাচানাচি করছিল। মূহুর্ত্বেই জয়িতার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, কেটে যায় সব ভয়। নববধুর স্নিগ্ধ আলিঙ্গনে ত্রৈলোক্য হারিয়ে যান গহীন সমুদ্রে। বিনুদি আর কাজলরেখাকে ছাপিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন একজন জয়িতার প্রাণপুরুষ!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার গঠনমূলক মন্তব্য ও সমালোচনা আমার লেখনীকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে। দয়া করে অশালীন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।