আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে

Latest News:

রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

ছিটমহল - ইতিহাসের এক অযাচিত বিষফোঁড়া

 
'নিজভূমে পরবাসীএই কথাটির সাথে আমরা কমবেশী পরিচিতআর এই কথাগুলোর বাস্তব প্রমাণ বাংলাদেশ-ভারতের মোট ১৬২টি ছিটমহলের মানুষতাদের নিজস্ব ভূমি আছেনামমাত্রে তারা একটি দেশের অংশ, কিন্তু তাদের নূন্যতম মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যাপারে সরকারের কোন মাথাব্যাথা নেই

বাংলাদেশ ও ভারত সরকার কয়েকবার পদক্ষেপ নিয়েও উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নিসর্বশেষ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তিতে স্থল সীমান্ত চুক্তি অর্থাৎ ছিটমহল বিনিময় প্রক্রিয়া আটকে ছিলসম্প্রতি পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়  তার অবস্থান পালটেছেনঅনেকদিন থেকে ঝুলে থাকা ছিটমহল বিনিময় ইস্যুতে তার সমর্থন জানানোর ঘোষনাকে সাধুবাদ জানাই

আমাদের অনেকের কাছেই ছিটমহল ব্যাপারটা ঠিক পরিষ্কার নয়একটি দেশের ভূমি আরেক দেশের ভেতরে গেল কীভাবে! কিছুদিন আগেও এ ব্যাপারটা আমার কাছে ঠিক বোধগম্য ছিলনা! ছিটমহল কী! তাই নিয়ে লিখতে বসেছি আজ

সহজভাবে বলতে গেলে ছিটমহল হচ্ছে কোন দেশের মূল ভৌগলিক সীমানা থেকে বিচ্ছিন্ন এবং অন্য একটি দেশের মূল ভৌগলিক সীমানার অভ্যন্তরে বিরাজমান ভূখণ্ড বা জনপদছিটমহল দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ওখানে যেতে হলে অন্য দেশটির জমির উপর দিয়ে যেতে হয়

বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে মোট ১৬২টি ছিটমহল রয়েছেএর মধ্যে ভারতের ভেতর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল আর বাংলাদেশের ভেতর ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছেবাংলাদেশ ও ভারতের মোট ছিটমহলের আয়তন ২৪ হাজার ২৬৮ একরবাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মোট ক্ষেত্র ৭ হাজার ১১০ একরঅন্যদিকে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের মোট ক্ষেত্র ১৭ হাজার ১৫৮ একর

বাংলাদেশের ছিটমহলগুলো প্রশাসনিক দিক থেকে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম এবং কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারী থানার অন্তর্গতএদের মধ্যে লালমনিরহাটের আওতায় ৩৩টি ও কুড়িগ্রামের আওতায় রয়েছে ১৮টি ছিটমহলভৌগলিক দিক থেকে এদের ৪৭টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের কুচবিহার জেলার অভ্যন্তরে এবং ৪টি জলপাইগুড়ি জেলার অভ্যন্তরে অবস্থিত

বাংলাদেশের ভেতর ভারতের ছিটমহলগুলোর মধ্যে পঞ্চগড় জেলার সদর, বোদা ও দেবীগঞ্জ থানায় মোট ৩৬টি, নীলফামারী জেলার ডিমলা থানায় ৪টি, লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম থানায় মোট ৫৯টি এবং কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারী থানায় মোট ১২টি ছিটমহল অবস্থিতপ্রশাসনিক দিক থেকে এগুলি সবই ভারতের কুচবিহার জেলার অন্তর্গত

ছিটমহলের ইতিহাসঃ
ছিটমহল সৃষ্টির পেছনে মূলত দায়ী রেডক্লীফের বিতর্কিত মানচিত্র তবে এই মানচিত্র নিয়ে আলোচনার আগে আরো কিছু বিষয় জানতে হবে

ছিটমহলের ইতিহাসের শুরু রংপুর অঞ্চলে মোগল শাসন প্রতিষ্ঠার পরআকবরের সেনাপতি রাজা মানসিংহ ষোল শতকে (১৫৭৫ সালে) রংপুর অঞ্চলের কিছু অংশ জয় করেসতের শতকে (১৬৮৬ সালে) এই পুরো অঞ্চলটি মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ঘোড়াঘাট সরকারের অধীনে ন্যস্ত হয়অর্থাৎ তখন রংপুর অঞ্চল মোগলদের অধীন এবং তার উত্তরে স্বাধীন কোচ রাজার রাজ্য কোচবিহার ব্রিটিশ আমলেও একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল

কোচ বিহার প্রিন্সলি স্টেট হিসেবে তথাকথিত স্বাধীনভাবে ইংরেজ আমলটিও পার করেতে পেরেছিলকোচ রাজাগণ এবং রংপুরের মহারাজাগণ মূলত ছিল সামন্ততাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, ছিল ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে মহলের বিনিময়বলা হয়ে থাকে, সেই মোগল আমলে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই ক্ষুদ্র রাজ্যের রাজা ও মহারাজারা মিলিত হতো তিস্তার পাড়ে দাবা ও তাস খেলার উদ্দেশ্যেখেলায় বাজি ধরা হতো বিভিন্ন মহলকে যা কাগজের টুকরা দিয়ে চিহ্নিত করা হতোখেলায় হারজিতের মধ্য দিয়ে এই কাগজের টুকরা বা ছিট বিনিময় হতোসাথে সাথে বদলাতো সংশ্লিষ্ট মহলের মালিকানাএভাবেই নাকি সেই আমলে তৈরি হয়েছিল একের রাজ্যের ভেতরে অন্যের ছিট মহল

আজকের ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের সমস্ত ভূমি ব্রিটিশ রাজের অন্তর্গত ছিল নাপ্রায় ৪০ শতাংশ ছিল বিভিন্ন তথাকথিতস্বাধীন রাজ্যযেগুলিকে বলা হতোনেটিভ স্টেটবাপ্রিন্সলি স্টেটএ রাজ্যগুলি কার্যত ছিল ব্রিটিশদের অধীন তবে অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে রাজাদের কর্তৃত্ব বজায় ছিলহায়দ্রাবাদের নিজামের মত কোচ রাজাও ব্রিটিশদের নেটিভ স্টেট-এর রাজা হিসেবে থেকে যানভারত ভাগের সময় এরূপ রাজ্যগুলিকে স্বাধীনতা দেয়া বা ভাগ করার এখতিয়ার ব্রিটিশ রাজের ছিল না

১৯৪৭ সালে ১৫ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স এক্ট-১৯৪৭পাশ করেএ আইন অনুসরণ করে সেই বছরেই ১৫ই আগস্ট ব্রিটিশ রাজ বিলুপ্ত হয় এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র গঠিত হয়প্রণীত আইনে বলা হয়, উপমহাদেশেরস্বাধীনঅঞ্চলগুলোর নিজ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দেয়া সুযোগ থাকবে অথবা তারা স্বাধীন সত্তা নিয়েও ইচ্ছে করলে থাকতে পারবেরাঙামাটির রামগড় ও বান্দরবান পূর্ব পাকিস্তানের সাথে এবং পূর্ব সীমান্তের পার্বত্য ত্রিপুরা ও উত্তরের কোচ বিহার ভারতের সাথে যুক্ত হয়

অন্য কোন রাজ্যে জমি নিয়ে সমস্যা না ঘটলেও সমস্যা বাঁধে কুচবিহারেতখনকার কোচ রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের কিছু জমিদারি স্বত্ব ছিল বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলার মধ্যেএকইভাবে রংপুর ও দিনাজপুরের জমিদারের কিছু তালুক ছিল কুচবিহার সীমানার ভেতরএ নিয়ে জমিদারদ্বয় কোন সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হন

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের উদ্দেশ্যে সীমানা নির্ধারণকল্পে সিরিল রেডক্লিফকে সভাপতি করে কমিশন গঠন করা হয়তিনি ছিলেন একজন আইনবেত্তা মাত্র, দেশের সীমানা নির্ধারণের মত কাজে তার কোন জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা ছিল নাকমিশনের অন্য সদস্যদেরও একই হাল ছিলকিন্তু যুদ্ধ বিধ্বস্ত ব্রিটিশ সরকারের না ছিল উদ্যম, না ছিল তার হাতে সময়

১৯৪৭ সালের ৮ জুলাই ভারতে ভারতে আসেন এবং মাত্র ছয় সপ্তাহের কাজ করে ১৩ আগস্ট তিনি সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেনকমিশন সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তা আর জমিদার, নবাব ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের দ্বারা দেশের সীমারেখা নির্ধারণ প্রভাবিত হয়েছেকমিশন কোচ বিহার ও রংপুর এলাকার ছিটমহলগুলো নিয়ে কোন সমাধানে আসতে পারেনি এবং ছিটমহলগুলো বজায় রাখেএভাবে রেডক্লিফের অংকিত ম্যাপ অনুসারেই শেষ পর্যন্ত ভারত ভাগ হয় ও ছিট মহলগুলো থেকে যায়
তথ্যসূত্রঃ এই পোস্টটি তৈরি করতে উইকিপিডিয়া ও কয়েকটি বাংলা ব্লগের সাহায্য নেওয়া হয়েছে


শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

হৃদয় ভাঙ্গার শব্দ

তোমাকে অনেকদিন দেখিনি
সে জন্য বুকে একটা চাপা ব্যাথা আছে অবশ্যই,
সেই সাথে আছে তোমাকে কাছে পাওয়ার প্রচন্ড আকুলতা।
তোমাকে দেখবো বলে কত রজনী
তাঁরাদের সাথে কথোপকথনে কাটিয়েছি,
চোখ বুঝেও আমি আমার সমস্ত সত্ত্বাজুড়ে
তোমার উপস্থিতি অনুভব করেছি।

কিন্ত আজ যখন তোমাকে দেখলাম,
অপরাজেয় বাংলার মতো বাকরুদ্ধ হয়ে রইলাম,
যেন এ জীবনের সব ভাষা বর্ণহীন হয়ে,
আমার উঠোনে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে,
কিন্ত কি এক অদৃশ্য বাধায় আমার
কপাট খুলে যেতে পারছেনা !

ক্যাম্পাসের কোমল বৃষ্টিভেজা দূর্বা মাড়িয়ে,
চলেছ এক যুবকের হাত ধরে,
তোমার মসৃণ পদযুগলে পিষ্ট হয়ে,
দূর্বাগুলো যেন চিৎকার করে বলছে,
আমাকে এভাবে শেষ করে দিওনা,
এ যেন দূর্বা নয়,
আমার হৃদয়ের আর্তচিৎকার!

আমার দৃষ্টি সীমায় যতোদূর চোখ যায়,
চেয়ে রইলাম তোমাদের পথপানে,
একসময় তুমি অদৃশ্য হয়ে গেলে
কিন্ত রয়ে গেল তোমার পদরেখা।
সর্পিল পদরেখাগুলো যেন বিষাক্ত সর্পিনী হয়ে
আমায় ক্ষত-বিক্ষত করছে ছোবলে ছোবলে।

তোমার মিথ্যে ছলনাময় মিষ্টি কথাগুলো
আজ বড্ড মনে পড়ছে,
তোমার বিগত মিষ্টবিষ বাক্যবাণ,
আমার কর্ণকোটরে বাজছে,
হৃদয় ভাঙার শব্দের মতো।

গোধুলির আভা

শেষ বিকেলের পড়ন্ত সূর্য্যরশ্নি যখন জানালার পর্দা ভেদ করে
তোমার কোমল গালে আলতো করে ছুঁয়ে যায়,
হালকা হলুদাভ আবেশ ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত মুখ ভঙ্গিমায়,
তখন সত্যি এক অদৃশ্য ঝড় বয়ে যায় আমার ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ের
প্রতিটি কোনায় কোনায়!

যখন অবাধ্য কেশগুচ্ছ কপালের স্নিগ্ধ জমিন ছেড়ে
ধীরলয়ে দোল খায় চোখের পাতায় পাতায়,
দীঘির কালো স্বচ্ছ জলের মতো যেন মিশে যেতে চায়
মায়াবী চোখের আনন্দ অশ্রুকণায়।

যখন নির্জন বিকেলে বয়ে যাওয়া চৈতালি হাওয়া
মধুর আবেশে আঁচড়ে পড়ে তোমার স্নিগ্ধ মুখাবয়বে,
ঠিক তখনি কেশগুচ্ছের আড়ালে দাঁড়িয়ে
কপালের ছোট্র টিপ তার উপস্থিতি জানান দিয়ে যায়।
জোড়া ভ্রু’র স্তব্ধতায় দীপ্ত ভঙ্গিতে অবস্থান করে,
উজ্জ্বল মায়াবী স্নিগ্ধতার মধুময় আবেশে,
তোমার সৌন্দর্য্যে যেন আরেকটু প্রলেপ মেখে দেয়,
মনহারা কাজলকালো টিপ!

কাজল কালো টিপের দীপ্ত উপস্থিতি আমার কাছে
মনে হয় প্রবল প্রতিদ্বন্ধীর মতো,
তুচ্ছ টিপের এমন সৌভাগ্যে
আমি যারপরনাই ঈর্ষান্বিত হয়ে যাই,
মনে হয় এখনি গিয়ে টুটি চেপে ধরি,
বুড়িগঙ্গার বিষাক্ত জলে শ্বাসরুদ্ধ করে
গলা ভর্তি পানি খাইয়ে ডুবিয়ে মারি।

যখন দুষ্টু অথচ মিষ্টি হাসি খেলে যায় তোমার চিবুকে,
তখন মনে হয় গোধুলীর আভা
উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে,
দোল পূর্ণিমার রঙ্গীন আবীরের ন্যায়
ছড়িয়ে পড়ছে তোমার ঠোটের কোনে।

ফাগুন সন্ধ্যাতে বসন্তের মৃদু উত্তাপে,
সামান্য ঘামের কণা যখন চিকন নাসিকা বেয়ে,
মুক্তো দানার মতো উজ্জ্বল্যে; বিন্দু বিন্দু হয়ে
গড়িয়ে পড়ে ঠোট অবধি,
মনে হয় দূরে ছুড়ে ফেলি
আমার যতো আছে ব্যবধি।

হে হৃদয়েশ্বরী,
তোমার মুখচ্ছায়ায় মুগ্ধ আমি!
আমার হৃদয় সমুদ্রে ভালোবাসার,
শুশুকেরা সাঁতার কাটে দিবানিশি।

শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বাংলা সিনেমার তালিকা



মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বাংলা সিনেমার তালিকা।

১৯৭০-এর দশকঃ

১.জীবন থেকে নেওয়া (১৯৭১) — জহির রায়হান পরিচালিত
২.ওরা ১১ জন (১৯৭২) — চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত
৩.বাঘা বাঙ্গালী (১৯৭২) — আনন্দ পরিচালিত
৪.জয় বাংলা (১৯৭২) — ফকরুল আলম পরিচালিত
৫.অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী (১৯৭২) — সুভাষ দত্ত পরিচালিত
৬.ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩) — আলমগীর কবির পরিচালিত
৭.আমার জন্মভূমি (১৯৭৩) — আলমগীর কুমকুম পরিচালিত
৮.সংগ্রাম (১৯৭৩) — চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত
৯.আবার তোরা মানুষ হ (১৯৭৩) — খান আতাউর রহমান
১০.আলোর মিছিল (১৯৭৪) — নারয়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত
১১.বাংলার ২৪ বছর (১৯৭৪) — মোহাম্মদ আলী পরিচালিত
১২.কার হাসি কে হাসে (১৯৭৪) — আনন্দ পরিচালিত
১৩.মেঘের অনেক রঙ (১৯৭৬) — হারুন-উর-রশিদ পরিচালিত


১৯৮০-এর দশকঃ

১৪.বাঁধন হারা (১৯৮১) — এ. জে. মিন্টু পরিচালিত
১৫.কলমীলতা (১৯৮১) — শহীদুল হক খান পরিচালিত
১৬.চিৎকার (১৯৮১) — মতিন রহমান পরিচালিত

১৯৯০-এর দশকঃ

১৭.একাত্তরের যীশু (১৯৯৩) — নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত
১৮.নদীর নাম মধুমতি (১৯৯৪) — তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত
১৯.আগুনের পরশমণি (১৯৯৫) — হুমায়ুন আহমেদ পরিচালিত
২০.মুক্তির গান (১৯৯৫) — তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত
২১.হাঙ্গর নদীর গ্রেনেড (১৯৯৭) — চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত
২২.মুক্তির কথা (১৯৯৯) — তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত

২০০০-এর দশকঃ

২৩.মাটির ময়না (২০০২) — তারেক মাসুদ পরিচালিত
২৪.জয়যাত্রা (২০০৪) — তৌকির আহমেদ পরিচালিত
২৫.শ্যামল ছায়া (২০০৪) — হুমায়ুন আহমেদ পরিচালিত
২৬.খেলাঘর (২০০৬) — মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত

২০১০-এর দশকঃ

২৭.আমার বন্ধু রাশেদ - মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত
২৮ গেরিলা (চলচ্চিত্র) - নাসিরুদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত

আরো আছেঃ এখনো অনেক রাত, মেঘের পর মেঘ ,হৃদয়ে আমার দেশ, হৃদয়ে'৭১, সংগ্রাম, ৭১ এর গেরিলা ও আরো নাম না জানা অনেক।

এটি কোন চূড়ান্ত তালিকা নয়। আপনার জানা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কোন চলচ্চিত্রের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে থাকলে দয়া করে মন্তব্যের ঘরে সেই সিনেমার নামটা উল্লেখ করে দিন। আমি পোস্টটা আপডেট করে নেব।

তথ্যসূত্রঃ বাংলা চলচ্চিত্র গ্রুপ

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

কল্পনা নয় বাস্তবের শার্লক হোমস

জেমস বন্ডের মতো কালজয়ী আরেকটি গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমস। শত বছর ধরে পাঠক হৃদয়ে যার সপ্রতিভ অবস্থান। মজার ব্যাপার হচ্ছে জেমস বন্ডের মতো এই শার্লক হোমস চরিত্রও বাস্তবের এক ব্যক্তিকে অবলম্বন করে রূপায়িত। তবে চলুন এখন জানি, কে সেই বাস্তবের শার্লক হোমস!

১৮৮৬ সালের মার্চ মাস। প্লাইমাউথের বুশ ভিলাতে ডাক্তারির পাশাপাশি গোয়েন্দা কাহিনী লিখায় হাত দেন আর্থার কোনান ডয়েল। ১৮৮৭ সালে A Tangled Skin উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি শার্লক হোমসের সৃষ্টি করেন। প্রথম দিকে শার্লকের নাম রাখা হয়েছিলো শেরিনফোর্ড হোমস। কিন্তু এই নাম পছন্দমতো না হওয়ায় বদলে রাখলেন শার্লক হোমস। সেই সাথে উপন্যাসের নাম বদলে রাখলেন ‘এ্যা স্টাডি ইন স্কারলেট’। একসময় ডাক্তারি পেশা ছেড়ে লেখালেখিতে পূর্ণ মনোনিবেশ করেন।

শিল্পীর চোখে শার্লক হোমস
 উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের নাম ঠিক হলো, কিন্তু তারপরও ডয়েল তীব্র উৎকন্ঠায় ভুগছেন। তার মনে শংকা ছিলো তিনি কি কাহিনীটাকে এগিয়ে নিতে পারবেন! তিনি এমন এক গোয়েন্দা চরিত্র সৃষ্টি করতে চান যা তখনকার জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র দুপ্যাঁকেও বুদ্ধিতে ছাড়িয়ে যায়। ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো ডক্টর বেলের কথা।

১৮৭০ সালে কোনান ডয়েল এডিনবরা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। সে সময় ডক্টর যোসেফ বেল এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও এডিনবরা মেডিক্যাল জার্নালের সম্পাদক। এডিনবরা গোলন্দাজ বাহিনীর তিনিই তখন উপদেষ্টা চিকিৎসক। কোনান ডয়েল নিজেই বলেছেন, “শার্লক হোমস চরিত্র সৃষ্টি করতে গিয়ে আমি বারবার তার কথাই ভাবছিলাম। আমার পুরনো শিক্ষক যোসেফ বেল। তাঁর ঈগল পাখির মতো চোখ-মুখ, কৌতূহলোদ্দীপক চলাফেরা, যেকোন ব্যাপারে তাঁর গভীর চিন্তাভাবনা, সমস্যা সমাধানের অদ্ভুত ক্ষমতা…এ সবই আমার বারবার মনে পড়ছিলো।”

এডিনবরা হাসপাতালের বহির্বিভাগে কোনান ডয়েল, ডক্টর বেলের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন, রোগীদের কেস হিস্ট্রি লিখতেন। তখন ডয়েল, বেলের ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে থেকে তার বিভিন্ন কর্মকান্ড স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন। একবার একজন রোগীকে দেখেই বেল বলে দিয়েছিলেন, “ভদ্রলোক হাইল্যান্ড রেজিমেন্টে একজন নন-কমিশনড অফিসার ছিলেন। বার্বাডোজে কিছুদিন কাটিয়ে এসেছেন।”

উপস্থিত হতভম্ব ছাত্রদের সামনে ডক্টর বেল ঘটনাটির ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন এভাবে, “ ভদ্রলোকের চেহারা, আচার-আচরণ বেশ সম্ভ্রান্ত কিন্তু উনি মাথা থেকে টুপি খোলেননি। সেনাবাহিনীর লোকেরা টুপি না খোলায় অভ্যস্ত। ভদ্রলোক নিশ্চয় কয়েকদিন আগে অবসর নিয়েছেন, তা না হলে তিনি এই সাধারণ ভব্যতায় অভ্যস্ত হতেন। ভদ্রলোক অন্যের উপর কর্তৃত্ব ফলাতে ভালোবাসেন, স্কটল্যান্ডের লোকের এ রকম অভ্যাস থাকে। ভদ্রলোকের গোদ রোগ হয়েছে, ওটা ওয়েষ্ট ইন্ডিজের রোগ, ব্রিটেনের নয়। ভদ্রলোক যে বার্বাডোজে ছিলেন, এটাই তার সবচেয়ে বড়প্রমাণ।”

 উপরের ব্যাখ্যা থেকেই বুঝা যায় ডক্টর বেল কতোটা তীক্ষ বুদ্ধির অধিকারী ছিলেন। আর তার সেই বুদ্ধিমত্তায় বেশী আকৃষ্ট হয়েছিলেন কোনান ডয়েল। তাইতো শার্লক হোমস চরিত্র অলংকরণ করতে গিয়ে বারবার বেলের কথা মনে হয়েছে তার। ১৮৯২ সালের ৪মে কোনান ডয়েল এক চিঠিতে ডক্টর বেলকে লিখেছিলেন, “এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, আপনাকে দেখেই আমি শার্লক হোমস এর চরিত্র সৃষ্টি করেছি। শার্লক হোমসের বিশ্লেষণী ক্ষমতা কোনও বানানো অতিরঞ্জিত ব্যাপার নয়। এডিনবরা হাসপাতালের বহির্বিভাগে আমি নিজে আপনাকে ওই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেখেছি।”

ছাত্রের এ গুরুদক্ষিণায় ডক্টর বেল অবশ্যই খুশি হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি নিজে শার্লক হোমসের উৎস সম্বন্ধে অন্য ধারণা পোষণ করতেন। এক চিঠিতে তিনি ডয়েলকে লিখেছিলেন, “আমারতো মনে হয় তুমিই শার্লক হোমস। আর তুমি সেটা ভালো করেই জানো।”

আর্থার কোনান ডয়েল, শার্লক হোমসকে নিয়ে চারটি উপন্যাস ও ছাপ্পান্নটি ছোটোগল্প লিখেছেন। ১ম কাহিনী ‘এ স্টাডি ইন স্কারলেট’ ১৮৮৭ সালে প্রকাশিত হয়। ২য় কাহিনী ‘দ্য সাইন অব দা ফোর’ ১৮৯০ সালে প্রকাশিত হয়। ১৮৯১ সালে দ্য স্ট্যান্ড ম্যাগাজিন পত্রিকায় প্রথম ছোটগল্পের সিরিজটি প্রকাশিত হওয়ার পরই শার্লক হোমস চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯২৭ সাল পর্যন্ত হোমসকে নিয়ে একগুচ্ছ ছোটগল্পের সিরিজ ও আরও দুটি ধারাবাহিক উপন্যাস প্রকাশিত হয়। হোমস কাহিনীর পটভূমির সময়কাল ১৮৮০ থেকে ১৯০৭ সাল। শেষ ঘটনাটির সময়কাল অবশ্য ১৯১৪।

আর্থার কোনান ডোয়েল
 শার্লক হোমস চরিত্র এতোটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো যে দিনদিন এর নতুন কাহিনীর পাঠক চাহিদা বেড়েই চলেছিলো। এক চরিত্রকে নিয়ে বারবার লিখতে লিখতে কোনান ডয়েল বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাছাড়া গোয়েন্দা কাহিনী লিখতে গেলে প্রয়োজন গভীর চিন্তাভাবনার। তাই শেষদিকে তিনি শার্লক হোমসকে নিয়ে লেখা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাঠক চাহিদার কাছে তিনি হার মেনেছিলেন। কোনান ডয়েলের মৃত্যুর পরও শার্লক হোমসকে নিয়ে অনেক কাহিনী লিখা হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ভাষায় নির্মিত হয়েছে অজস্র চলচিত্র।

আজও বিশ্বের রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের কাছে শার্লক হোমস সত্যিকারের এক জীবন্ত চরিত্র। শার্লক হোমস যে একটা কাল্পনিক চরিত্র, একথা আজও অনেকেই বিশ্বাস করতে চাননা। এখনও তার নামে ২২১/বি, বেকার স্ট্রিটের ঠিকানায় সপ্তাহে গড়ে ৫০-৬০ খানা চিঠি আসে । গল্পের চিঠিগুলোর উত্তর দিতেন তার সহকারী বন্ধু ওয়াটসন। কিন্তু এখন ওয়াটসন না থাকলেও উত্তর দেওয়া হয় ‘হোমস সোসাইটি’ এর পক্ষ থেকে । সবাইকে জানানো হয়, আমরা দুঃখিত! শার্লক হোমস এখন গোয়েন্দাগিরি করছেন না, তিনি তার পেশা ছেড়ে মৌমাছি পালনে ব্যস্ত। সত্যিই এ এক অদ্ভুত ব্যাপার।

কি পাঠাবেন নাকি আপনিও একটি চিঠি! বলা যায়না গল্পের শার্লক হোমস বাস্তবে উত্তর দিয়ে দিতে পারেন!!!

রক্ত মাংসের আসল জেমস বন্ড

একজন সাহিত্যিক তার কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য রচনা করে থাকেন। তারা তাদের লেখনীর মাধ্যমে অনেক নতুন নতুন চরিত্রের সৃষ্টি করেন। সেইসব চরিত্রের মধ্যে কিছু চরিত্র সাহিত্য জগতে এক অনন্য স্থান অর্জন করে। সেই চরিত্রগুলোর সাথে লেখক-পাঠক উভয়েই এতোটা মিশে যান যে গল্প-উপন্যাসের চরিত্রগুলো আমাদের বাস্তব জীবনের অংশ হিসেবেই মনে হয়। আসলেই এরকম কিছু বিখ্যাত চরিত্র আছে যা বাস্তব জীবনের লুকায়িত ভান্ডার থেকে তুলে নিয়ে সাহিত্যিক সাহিত্য ভুবনে আলোড়ন তুলেছেন। আজ সেইরকম একটি বিখ্যাত চরিত্রকে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

১৯৫২ সাল। ক্যারিবীয় উপকূলের জ্যামাইকা দ্বীপের গোল্ডনেয়ি শহরে নিজ বাড়িতে বসে বিখ্যাত সাহিত্যিক ইয়ান ফ্লেমিং তার প্রথম উপন্যাস ‘ক্যাসিনো রয়েল’ লিখতে শুরু করেছেন। তিনি তার প্রথম উপন্যাস থেকেই একটি দুর্ধর্ষ নায়ক চরিত্র সৃষ্টি করতে চান। লিখা শুরু হয়ে গেছে কিন্তু নায়কের নাম নিয়ে পড়লেন মহা সমস্যায়। মাথার মধ্যে অনেক নাম আসছে কিন্তু কোনটিই মনমতো হচ্ছেনা। জমকালো গম্ভীর কোন নাম নয়, নিতান্ত সহজ-সরল সাধারন একটি নাম তিনি খুঁজছিলেন। বিভিন্ন বইপত্র তন্ন-তন্ন করে খুঁজেও যুতসই নাম পাচ্ছেননা!

বইপত্র ঘাটাঘাটি করার সময় হঠাৎ একটি বইয়ের ওপর তার চোখ আটকে গেলো। বইটি ওয়েষ্ট ইন্ডিজের পাখিদের নিয়ে লেখা। বইয়ের নাম ‘বার্ডস অব ওয়েষ্ট ইন্ডিজ’। লেখকের নাম খুব সাধারণ, আচমকা এই নামটি যেন ধাক্কা মারলো তার বুকে। বইটির লেখকের নাম জেমস বন্ড

জেমস বন্ডের স্রস্টা ইয়ান ফ্লেমিং
 আর পিছনে ফিরে তাকাননি ফ্লেমিং। জেমস বন্ড নামটিকে মুল চরিত্র বানিয়ে উপন্যাস এগিয়ে নিতে শুরু করলেন। তার পরের ঘটনা তো আর ইতিহাস। সর্বকালের প্রিয় চরিত্র হিসেবে স্থান করে নিলো পাঠকের হৃদয়ে। ফ্লেমিং পরে রসিকতা করে বলেছিলেন “আমার উপন্যাস লেখার পেছনে সেরকম কোন মহৎ কোনও কারণ নেই। ৪৩ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলাম, বুড়ো বয়সে বিয়ে করার সেই আঘাতটাকে কাটিয়ে ওঠার জন্যই বোধহয় উপন্যাস লিখতে শুরু করি।”

বন্ডের অভিযান যেন শুরু হয়েছিলো ফ্লেমিংয়ের অবিবাহিত জীবনকে বিদায় জানাতে। নায়ক জেমস বন্ড তার অবিবাহিত জীবনকে বিদায় অভিবাদন জানিয়েছিলো, কিন্তু তার স্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিংকে নয়। স্রষ্টা ফ্লেমিং এবং সৃষ্টি জেমস বন্ড, এই দুজনের মধ্যে অনেক মিল। যেন একজনকে ছাড়া অন্যজন পরিপূর্ণতা লাভ  করতে পারতোনা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্লেমিং নৌবাহিনীর গুপ্তচর বিভাগের প্রধান পরিচালকের সহকারী ছিলেন। চাকরী-সূত্রে বেশ কিছু গুপ্তচর এজেন্টকে তিনি অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছেন। এদের মধ্যে একজন হচ্ছেন দুস্কো পোপোভ। পোপোভ জন্মসূত্রে যুগোস্লাভিয়ার লোক, কাজ করতেন ব্রিটিশ গুপ্তচর বিভাগে। ব্রিটিশ এজেন্ট হিসেবে তিনি গোপনে নাৎসি গুপ্তচরদের সঙ্গে মিশে যেতেন, সংগ্রহ করতেন জার্মানদের সব গোপন খবর। ব্রিটিশদের সম্বন্ধে ভুল খবর দিয়ে নাৎসি বাহিনীকে উলটোপথে পরিচালিত করতেন।

অন্যদিকে ব্রিটেনের ‘ডাবল এক্স’ কমিটির প্রাণ ছিলেন এই দুস্কো পোপোভ। ডাবল এক্স কমিটি নামের মধ্যেই তার কাজ-কারবারের রহস্য লুকিয়ে আছে। ইংরেজী ‘ডাবল ক্রসিং’ কে বাংলা করলে দাঁড়ায় দ্বৈত ভুমিকা। নাৎসি গুপ্তচর বাহিনীর সঙ্গে মিশে যাবে কিছু ব্রিটিশ এজেন্ট, ভুল খবর দিয়ে তারা নাৎসি বাহিনীকে ঠেলে দেবে বিপর্যয়ের মুখে। উপন্যাসের বন্ডের মতো বাস্তবের এই বন্ড দুস্কো পোপোভ খুব বিপজ্জনকভাবে বাঁচতেন। রাজকীয় জীবন যাপন করতেন। আর কর্মদক্ষতা ছিলো অসাধারণেরও অসাধারণ। আশ্চর্য্যরকম দক্ষতায় তিনি সব বাধা দূর করতেন।

বাস্তবের জেমস বন্ডঃ দুস্কো পোপোভ

একসময় ফ্লেমিং পোপোভকে ক্যাসিনোতে দেখেছিলেন। তীক্ষ বুদ্ধিমত্তার সাথে জুয়ার চাল দিতেন পোপোভ। রুলেত টেবিলেই তিনি প্রমাণ করে দেন, জীবন নিয়ে জুয়া খেলতেও তিনি বিন্দুমাত্র পেছপা নন। আর আমাদের গল্পের জেমস বন্ডের অভিযানও শুরু হয়েছিলো ক্যাসিনো থেকে।

১৯৭৪ সালে দুস্কো পোপোভ একটি বই প্রকাশ করেন। বইটির নাম ছিলো ‘স্পাই-কাউন্টারস্পাই’। ঘটনার ঘনঘটা, মৃত্যু মুখে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতাসহ পোপোভের জীবনের অনেক রোমাঞ্চকর ঘটনা এই বইয়ে স্থান পেয়েছে। বন্ডের মতো পোপোভও বিপদের মুখে স্থির, অবিচল থাকতেন। পোপোভ লিখেছেন, “আমি শুনেছি আমার অভিজ্ঞতা ও জীবনের ওপর কিছু-কিছু ক্ষেত্রে ভিত্তি করে ইয়ান ফ্লেমিং জেমস বন্ড চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। জেমস বন্ড রক্তমাংসের মানুষ হলে গুপ্তচরবৃত্তির দুনিয়ায় ৪৮ঘন্টাও বেঁচে থাকতেন কিনা সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। এই পৃথিবীতে পদে-পদে মৃত্যু আর বিপদের হাতছানি।”

 এই রোমাঞ্চকর জনপ্রিয় চরিত্রে স্যঁ কোনারি, রজার মুর, পিয়ার্স ব্রোসনান, ডেনিয়েল ক্রেইগ সহ প্রমুখ অভিনেতা এই চরিত্রে অভিনয় করে মানুষের মন জয় করেছেন। আজও বিশ্বের রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের কাছে জেমস বন্ড অন্যতম প্রিয় একটি চরিত্র।

আমার প্রথম রক্তদান

সালটা ছিল যথাসম্ভব ২০০৯। আমার ছোট মাসির হঠাত প্রসব ব্যাথা উঠলে সিলেট এমএজি ওসমানি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। রাতে যদি ঔষধ বা অন্য কোন জরুরী প্রয়োজন পড়ে তাই সেদিন রাত্রে লন্টু ভাগনা ও আমার উপর দায়ীত্ব পড়লো ওয়ার্ডের বাইরে অবস্থানের জন্য।

আমি আর লন্টু ভাগনা মোবাইল ব্রাউজিং করে মশার কামড় খেয়ে খেয়ে রাত প্রায় কাটিয়ে দিচ্ছিলাম। হঠাত ভোর চারটার দিকে লক্ষ্য করলাম কয়েকজন মানুষ ত্রস্ত পায়ে বারবার এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করছে। তাদের অস্থিরতায় বুঝতে পারলাম কোন বড় ধরণের সমস্যা হয়েছে। নার্স ও ডিউটি অফিসারের সাথেও ক্ষণে ক্ষণে আলাপ করতে দেখলাম।

আমার আবার নিজ থেকে অতি আগ্রহ দেখানোর অভ্যাস কম। কিন্তু তাদের উৎকণ্ঠা আর অস্থিরতায় বসে থাকতে পারলাম না। কাছাকাছি গিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম। আমি আর লন্টু ভাগনা ওদের সাথে কথা বলে জানলাম, একজন প্র্যাগন্যান্ট মহিলার জন্য ইমিডিয়েট ২ব্যাগ এ পজেটিভ (এ+) রক্ত দরকার। কিন্তু তারা অনেক চেষ্টা করে মাত্র এক ব্যাগ রক্ত জোগাড় করতে পেরেছে। এখন আরো এক ব্যাগ রক্ত না হলে অপারেশন করা যাবেনা।

আমি জানতাম আমার রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ। কিন্তু এর আগে কখনও রক্ত দেয়া হয়নি। খানিকটা ভীরু ভীরু কন্ঠে বললাম, আমি যতোটুকু জানি আমার রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ। আপনারা আরেকবার চেক করে শিওর হলে আমি রক্ত দিতে পারি। মুখে বলছিলাম ঠিক কিন্তু একটু ভয় ভয় করছিল।

লন্টু ভাগনা পাশ থেকে চিমটি কাটলো। ভয় করলেও আমি অটল থাকলাম রক্ত দেবোই। রোগীর অভিভাবকরা আমাকে মেডিকেলের প্যাথলজি বিভাগে নিয়ে গেলেন। রক্ত পরীক্ষা করে আমার রক্তের গ্রুপ কনফার্ম হলেন। বেডে শুইয়ে সুঁচ গেঁথে দেয়া হলো ডানহাতের একটি শিরাতে।

প্রথম যখন রক্ত টানা শুরু হলো তখন চোখে অন্ধকার দেখলাম। মাথাটা ঝিম ঝিম করতে শুরু করলো। শরীরটা দূর্বল হয়ে এলো। ওই অবস্থাতেই নিজেকে খানিকটা ভতসর্না করলাম। কি দরকার ছিলো নিজ থেকে বিপদ ডেকে আনার!!!!!

ধীরে ধীরে শরীর খানিকটা স্বাভাবিক হলো। প্রাথমিক অবস্থার মতো দূর্বল লাগছেনা। রক্ত দেয়া শেষ হলে একটা ডিম আর ম্যাংগো জুস দেয়া হলো খাওয়ার জন্য। শরীরে খানিকটা শক্তি ফিরে পেলাম।
সবেচেয়ে আশ্চর্য্যন্বিত হয়েছিলাম, আমি যখন চলে আসবো তখন ওই রোগিনীর স্বামী আমার হাতে পাঁচশ টাকার দুটি নোট গুঁজে দিতে চাইলেন!!!!!

আমি তো রীতিমতো অবাক! আমি জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার!

রোগিনীর স্বামী বললেন, এটা কিছু না ভাই। কিছু কিনে খাবেন।

আমি এবার রীতিমতো অপমানিতবোধ করলাম। আমি কোন উত্তর দেয়ার আগেই ডিউটি অফিসার রোগিনীর স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এটা আপনি কি করলেন? আপনি একটু আগে যে বিপদে ছিলেন তাতে করে উনি আপনার কাছে বিশ-ত্রিশ হাজার টাকা চাইতে পারতেন। উনি স্বেচ্ছ্বায় রক্ত দিয়েছেন বলেই এতো রাতে রক্ত পাওয়া গেল। আর আপনি কিনা উনাকে টাকা দিয়ে ছোট করছেন !!!!!!!!!

রোগিনীর স্বামী লজ্জ্বা পেলেন বোঝা গেল। তিনি টাকাটা নিজের পকেটে ফিরিয়ে নিলেন। ততোক্ষণে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, মাসীর খোঁজ নিয়ে মেডিকেল থেকে বেরিয়ে এলাম।

সেদিন বিকালেই মাসিকে দেখতে গিয়ে ওই রোগিনীর খোঁজ নিলাম। সেই বোনটির পাশে একটি ফুটফুটে মেয়ে সন্তান দেখতে পেয়ে আমার ভীষন ভালো লেগেছিল।

আমার বন্ধু এমরান


ফার্মের মুরগীর মতো আর দশটা শহুরে শিশুর মতোই বদ্ধ পরিবেশে আমার বেড়ে ওঠা। তারপরও অল্প কিছুদিন দুরন্ত শৈশবের খানিক পরশ পেয়েছিলাম বন্ধু এমরানের সৌজন্যে।

আমার যখন পাঁচ বছর বয়স, বাবা সিলেটের শহরতলী আখালিয়ার হাওলাদার পাড়ায় (বর্তমানে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্গত) মজুমদার ঠিলার পাদদেশে নতুন বাসা বানিয়েছেন। গুটিকয়েক পরিবার মাত্রই এখানে বসত গড়তে শুরু করেছে। অল্প সংখ্যক বাড়ি থাকায় এলাকাটা এক অর্থে খুবই নীরব ও শান্ত
 
আমাদের বাসা থেকে খানিকটা দূরেই থাকতো এমরান। ওর বাবা এখানকার একটা নার্সারিতে কাজ করতেন। সেই সুবাদে ওরা ওই নার্সারিতেই ছোট্ট একটা বাঁশের বেড়া দেয়া ঘরে থাকতো। সে আমার থেকে হয়তো দু-এক বছরের বড় হয়ে থাকতে পারে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার সাথে আমার বেশ ভাব হয়ে গেল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওদের নার্সারিতে চলে যেতাম। ওদের নার্সারিতে বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা ছিল। তবে নারকেল গাছের চারাই ছিল সংখ্যায় বেশী। এমরানের বাবাকে দেখতাম কোদাল দিয়ে জমির মাটি আলগা করে দিতে, নিড়ানি দিয়ে গাছের আগাছা পরিস্কার করে দিতে।

এমরানদের নার্সারির পেছনেই ছিল একটা অগভীর কিন্ত প্রশস্ত ছড়া (ছোট ঠিলার মাঝ দিয়ে চলা ছোট প্রাকৃতিক খালকে ছড়া বলে।)। প্রায় প্রত্যেকদিন এমরান ও আমি ওর বড়শী নিয়ে ওই ছড়াতে চলে যেতাম। এমরান মাটি খুঁড়ে জির (কেঁচো) খুঁজে বের করতো। তারপর সেটা বড়শীর মাথায় গেঁথে দিয়ে বড়শীর সুতাটা পানিতে ফেলে দিতো। ছড়াতে যে খুব একটা মাছ ছিলো তা নয়, প্রত্যেকদিন যে মাছ ধরা পড়তো তাও নয়মাঝে মাঝে ট্যাংরা, পুঁটি আর ভাগ্য ভালো হলে বড়জোড় কই মাছ ধরা পড়তো।

একদিন হয়েছে কি, প্রথমে কয়েকটা পুঁটি মাছ ধরে আমরা তা রাখলাম বাঁশের ঝুড়িতে। তারপর মোটামুটি বড় দুইটা কই মাছ ধরা পড়লে তাও রাখলাম ওই ঝুড়িতে। তারপর আরো কিছু পুঁটি মাছ ধরা পড়লে সেগুলোও রাখা হলো ঐ ঝুড়িতেঝুড়ির মুখটা কলসের মুখের মতো সরু ছিল, তাই বাইরে থেকে ভেতরটা ভালো করে দেখা যাচ্ছিলোনা। সেদিনের মতো মাছ ধরা শেষ হলে এমরানদের নার্সারিতে ফিরে কয়েকটা নারকেলের চারার আড়ালে দাঁড়িয়ে মাছভর্তি ঝুড়িটা মাটির দিকে উপোর করে ঢালতেই আমরা দুজনে তাজ্জব হয়ে গেলাম। মাটিতে শুধুমাত্র দুটো কই মাছ লুটোপুটি খাচ্ছে, সব পুঁটি মাছ উধাও! আমরা হতভম্ব হয়ে একে-অপরের দিকে আশ্চর্য্য চোখে তাকিয়েই ভয় পেয়ে দিলাম ভোঁ-দৌড়আজ ভাবলে হাসি পায়, আমরা তখন কি আর জানতাম কই মাছ একটি রাক্ষুসে মাছ!

প্রায়দিনই কাদা-পানিতে নেয়ে যখন বাসায় ফিরতাম তখন সূর্য্য ঠিক মাথার উপরে থাকতো। চুপিচুপি ঘরের কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকতাম, আগ বাড়িয়ে মাকে ডাকতাম না। তারপর মা দেখতে পেলে খানিকটা উত্তম-মধ্যম দিয়ে স্নান করাতেন। স্নান করার পর সবচেয়ে বিরক্ত লাগতো গায়ে সরিষার তেল দেয়া। তখনও বডি লোশনের এতোটা প্রচলন হয়নি। সরিষার তেল গায়ে-মুখে দিলে খুব জ্বলতো, যা আমার খুব অস্বস্তি লাগতো। তারপর খাইয়ে-দাইয়ে মা আমাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতেনআমিও লক্ষী ছেলের মতো ঘুমের ভান করে ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকতাম, আর তক্কে তক্কে থাকতাম মা কখন ঘুমোবেন। যখন মোটামুটি নিশ্চিত হতাম মা ঘুমিয়ে পড়েছেন তখন পা টিপে টিপে বিছানা থেকে নেমে বেতের মোড়াটাকে দরজা পর্যন্ত নিয়ে যেতাম, তারপর মাঝখানের ছিটকিনি খুলেই দিতাম দৌড়। বাইরে আগে থেকেই অপেক্ষা করতো এমরান। তার হাতে থাকতো ঘুড়ি, নাটাই। এমরান আর আমি তরতর করে উঠে যেতাম মজুমদারের ঠিলায়। ঠিলা দিয়ে উঠার সময় মাঝে মাঝে চোখে পড়তো বনমোরগ। বনমোরগের কথা এখন চিন্তা করাই কল্পনা। ঠিলা বেয়ে উপরে উঠতে আমার খুব কষ্ট হতো। এমরান আমাকে হাত ধরে ধরে উপরে নিয়ে যেতো। উপর উঠে আমরা একটা শিমুল তুলা গাছের নিচে দাঁড়াতাম। আমি ঘুড়ি উড়াতে পারতাম না। এমরানের হাতে থাকতো নাটাই। আমার কাজ ছিল সুতাসহ ঘুড়িকে খানিক দূর নিয়ে যাওয়া তারপর সেটাকে বাতাসে উড়িয়ে দেওয়া। আর এমরান নাটাইকে নেড়ে নেড়ে ঘুড়িকে বাতাসে ভাসিয়ে অনেক উচু পর্যন্ত উঠাতো। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলতো আমাদের ঘুড়ি ওড়ানো। যেদিন বেশী সন্ধ্যা হয়ে যেত, সেদিন ঠিলা থেকে নামার সময় শেয়ালের মুখোমুখি হতে হতো। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যেতামএমরান আমাকে সাহস দিত, আর শেয়ালকে তাড়িয়ে দিত।

আমাদের বাসা থেকে খানিকটা দূরে একটা চালতা গাছ ছিল। জায়গাটা খুব নীরব ছিল। চালতা গাছের কাছাকাছি একটা বাড়ি থাকলেও সেই বাড়িতে কখনো মানুষজন দেখেছি বলে মনে পড়ছেনা। তো মাঝে মাঝে আমি আর এমরান ঐ চালতা গাছের নিচে চলে যেতাম। প্রায়দিনই গাছের নিচে চালতা পড়ে থাকতো। আমরা সেগুলো কুড়িয়ে নিতাম। চালতা গাছের পাশের পুকুরের লাল শাপলা দেখে মুগ্ধ হতাম। এমরানকে দেখতাম শাপলার আঁটি পানি থেকে তুলে চিবুতে। আমার ঘেন্না করতো তাই  আমি চিবোতাম না।

এভাবেই আরো কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে আমার শৈশবের একটা মুহুর্ত্ব কেটেছিল। তারপর একদিন এমরানরা নার্সারি ছেড়ে চলে গেল। আর সেই সাথে  আমার দূরন্ত শৈশবের মৃত্যু ঘটলো। আমার বাবা-মা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন আর আমি পরিণত হলাম সত্যিকারের ফার্মের মুরগীতে।

বন্ধু এমরান কোথায় আছে, কেমন আছে জানিনা। তবে এখনও ওকে অনেক মনে পড়ে। আমাকে এক টুকরো দূরন্ত শৈশব উপহার দেয়ার জন্য তোকে অনেক ধন্যবাদ বন্ধু । যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস বন্ধু

বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

স্নেহে আর্দ্র শিক্ষক আমার



স্কুল জীবনে যে জিনিসগুলো ভয় পেতাম তার একটি হলো গ্রীষ্মের কড়া রোদে দাঁড়িয়ে এসেম্বলীতে অংশগ্রহন করাএসেম্বলী ফাঁকি দেয়ারও কোন সুযোগ ছিলোনাস্যাররা ক্লাস থেকে খুঁজে খুঁজে ছাত্রদের বের করে আনতেনতাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সমাবেশে অংশ নিতে হতো

তখন ক্লাস সিক্সে পড়িকড়া রোদে এসেম্বলীতে দাঁড়িয়ে আছিজাতীয় সংগীত চলাকালীন হঠাত চোখে অন্ধকার দেখলামকিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার সামনে দাঁড়ানো ছাত্রের গায়ে ঢলে পড়লামআমি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম ঠিক কিন্তু অজ্ঞান হইনিআমাদের ক্লাসের সারির কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আমাদের ক্লাস টিচার শিশির (শিশির চন্দ্র হাওলাদার) স্যারআমাকে পড়ে যেতে দেখে স্যার দৌড়ে এলেনতারপর যে ঘটনা ঘটলো তা আমার জীবনে বাঁধিয়ে রাখার মতো একটা ঘটনাস্যার আমাকে কোলে তুলে নিয়ে অফিস রুমে চলে গেলেনশিশির স্যারের পিছু পিছু আমার অন্যতম প্রিয় শিক্ষক প্রয়াত আবু হেনা চৌধুরী স্যারও অফিস রুমে এলেন

শিশির স্যার একটা শক্ত কাগজ নিয়ে আমার মাথায় বাতাস করতে লাগলেনআর বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, এখন কেমন লাগছে?

আবু হেনা স্যার চিনি আর লবন দিয়ে নিজ হাতে দ্রুত এক গ্লাস শরবত নিয়ে এলেনতারপর একহাতে আমাকে শরবত খাইয়ে দিলেন, আরেক হাতে মাথায় শান্তির পরশ বুলিয়ে দিলেনশিশির স্যার তখনও বাতাস করে চলেছেনশরবত খেয়ে যখন একটু আরাম বোধ করছি তখন শিশির স্যার জিজ্ঞেস করলেন, আমি ক্লাস করতে পারবো কিনা? আমি হ্যাঁ বা না বোধক কোন উত্তর দিলাম নাস্যার বললেন, তাহলে আজ আর ক্লাস করে লাভ নেইচলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি

অনেকক্ষণ থেকেই আমি ঘোরের মধ্যে আছিস্কুলের সবচাইতে জনপ্রিয় দু-দুজন স্যার আমাকে শুশ্রুষা করছেন, আদর করে বাতাস করছেন, শরবত খাওয়াচ্ছেন আমি নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিনাআমি স্যারকে বললাম, না স্যার ক্লাস করতে পারবো
তখন আবু হেনা স্যার বললেন, ক্লাস করতে না পারলে বলোআমরা কেউ একজন তোমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসবো

ততোক্ষণে আমি অনেকটাই ধাতস্থ হয়ে উঠেছিএখন আর দূর্বল লাগছেনাআমি আবার বললাম, ক্লাস করতে পারবোস্যাররা আর জোর করলেন নাশিশির স্যার বললেন, বসো আমি ক্লাসে যাওয়ার সময় আমার সাথে ক্লাসে যাবে

আমার দুজন প্রিয় শিক্ষকের এই ভালোবাসা আর মমত্ব আমি আমার জীবনেও ভুলতে পারবোনাস্যারদের এই ভালোবাসা আমার পরম পাওয়া

স্কুল ছেড়েছি নয় বছর হয়ে গেলকিন্তু এখনও ভুলতে পারিনা এরকম টুকরো টুকরো স্মৃতিখুব বেশী মিস করি দি এইডেড হাই স্কুলের আবু হেনা স্যার, শিশির স্যার, শামসুদ্দিন স্যার, হামিদুল হক চৌধুরী স্যার, নীলোৎপল স্যার, সমীরণ স্যার, পিংকু স্যার, শমসের আলী স্যার সহ অন্যান্য স্যারদের
Copyright © 2014 রিপন ঘোষের খেরোখাতা All Right Reserved
^
Blogger দ্বারা পরিচালিত.