আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে

Latest News:

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

রক্ত মাংসের আসল জেমস বন্ড

একজন সাহিত্যিক তার কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য রচনা করে থাকেন। তারা তাদের লেখনীর মাধ্যমে অনেক নতুন নতুন চরিত্রের সৃষ্টি করেন। সেইসব চরিত্রের মধ্যে কিছু চরিত্র সাহিত্য জগতে এক অনন্য স্থান অর্জন করে। সেই চরিত্রগুলোর সাথে লেখক-পাঠক উভয়েই এতোটা মিশে যান যে গল্প-উপন্যাসের চরিত্রগুলো আমাদের বাস্তব জীবনের অংশ হিসেবেই মনে হয়। আসলেই এরকম কিছু বিখ্যাত চরিত্র আছে যা বাস্তব জীবনের লুকায়িত ভান্ডার থেকে তুলে নিয়ে সাহিত্যিক সাহিত্য ভুবনে আলোড়ন তুলেছেন। আজ সেইরকম একটি বিখ্যাত চরিত্রকে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

১৯৫২ সাল। ক্যারিবীয় উপকূলের জ্যামাইকা দ্বীপের গোল্ডনেয়ি শহরে নিজ বাড়িতে বসে বিখ্যাত সাহিত্যিক ইয়ান ফ্লেমিং তার প্রথম উপন্যাস ‘ক্যাসিনো রয়েল’ লিখতে শুরু করেছেন। তিনি তার প্রথম উপন্যাস থেকেই একটি দুর্ধর্ষ নায়ক চরিত্র সৃষ্টি করতে চান। লিখা শুরু হয়ে গেছে কিন্তু নায়কের নাম নিয়ে পড়লেন মহা সমস্যায়। মাথার মধ্যে অনেক নাম আসছে কিন্তু কোনটিই মনমতো হচ্ছেনা। জমকালো গম্ভীর কোন নাম নয়, নিতান্ত সহজ-সরল সাধারন একটি নাম তিনি খুঁজছিলেন। বিভিন্ন বইপত্র তন্ন-তন্ন করে খুঁজেও যুতসই নাম পাচ্ছেননা!

বইপত্র ঘাটাঘাটি করার সময় হঠাৎ একটি বইয়ের ওপর তার চোখ আটকে গেলো। বইটি ওয়েষ্ট ইন্ডিজের পাখিদের নিয়ে লেখা। বইয়ের নাম ‘বার্ডস অব ওয়েষ্ট ইন্ডিজ’। লেখকের নাম খুব সাধারণ, আচমকা এই নামটি যেন ধাক্কা মারলো তার বুকে। বইটির লেখকের নাম জেমস বন্ড

জেমস বন্ডের স্রস্টা ইয়ান ফ্লেমিং
 আর পিছনে ফিরে তাকাননি ফ্লেমিং। জেমস বন্ড নামটিকে মুল চরিত্র বানিয়ে উপন্যাস এগিয়ে নিতে শুরু করলেন। তার পরের ঘটনা তো আর ইতিহাস। সর্বকালের প্রিয় চরিত্র হিসেবে স্থান করে নিলো পাঠকের হৃদয়ে। ফ্লেমিং পরে রসিকতা করে বলেছিলেন “আমার উপন্যাস লেখার পেছনে সেরকম কোন মহৎ কোনও কারণ নেই। ৪৩ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলাম, বুড়ো বয়সে বিয়ে করার সেই আঘাতটাকে কাটিয়ে ওঠার জন্যই বোধহয় উপন্যাস লিখতে শুরু করি।”

বন্ডের অভিযান যেন শুরু হয়েছিলো ফ্লেমিংয়ের অবিবাহিত জীবনকে বিদায় জানাতে। নায়ক জেমস বন্ড তার অবিবাহিত জীবনকে বিদায় অভিবাদন জানিয়েছিলো, কিন্তু তার স্রষ্টা ইয়ান ফ্লেমিংকে নয়। স্রষ্টা ফ্লেমিং এবং সৃষ্টি জেমস বন্ড, এই দুজনের মধ্যে অনেক মিল। যেন একজনকে ছাড়া অন্যজন পরিপূর্ণতা লাভ  করতে পারতোনা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্লেমিং নৌবাহিনীর গুপ্তচর বিভাগের প্রধান পরিচালকের সহকারী ছিলেন। চাকরী-সূত্রে বেশ কিছু গুপ্তচর এজেন্টকে তিনি অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছেন। এদের মধ্যে একজন হচ্ছেন দুস্কো পোপোভ। পোপোভ জন্মসূত্রে যুগোস্লাভিয়ার লোক, কাজ করতেন ব্রিটিশ গুপ্তচর বিভাগে। ব্রিটিশ এজেন্ট হিসেবে তিনি গোপনে নাৎসি গুপ্তচরদের সঙ্গে মিশে যেতেন, সংগ্রহ করতেন জার্মানদের সব গোপন খবর। ব্রিটিশদের সম্বন্ধে ভুল খবর দিয়ে নাৎসি বাহিনীকে উলটোপথে পরিচালিত করতেন।

অন্যদিকে ব্রিটেনের ‘ডাবল এক্স’ কমিটির প্রাণ ছিলেন এই দুস্কো পোপোভ। ডাবল এক্স কমিটি নামের মধ্যেই তার কাজ-কারবারের রহস্য লুকিয়ে আছে। ইংরেজী ‘ডাবল ক্রসিং’ কে বাংলা করলে দাঁড়ায় দ্বৈত ভুমিকা। নাৎসি গুপ্তচর বাহিনীর সঙ্গে মিশে যাবে কিছু ব্রিটিশ এজেন্ট, ভুল খবর দিয়ে তারা নাৎসি বাহিনীকে ঠেলে দেবে বিপর্যয়ের মুখে। উপন্যাসের বন্ডের মতো বাস্তবের এই বন্ড দুস্কো পোপোভ খুব বিপজ্জনকভাবে বাঁচতেন। রাজকীয় জীবন যাপন করতেন। আর কর্মদক্ষতা ছিলো অসাধারণেরও অসাধারণ। আশ্চর্য্যরকম দক্ষতায় তিনি সব বাধা দূর করতেন।

বাস্তবের জেমস বন্ডঃ দুস্কো পোপোভ

একসময় ফ্লেমিং পোপোভকে ক্যাসিনোতে দেখেছিলেন। তীক্ষ বুদ্ধিমত্তার সাথে জুয়ার চাল দিতেন পোপোভ। রুলেত টেবিলেই তিনি প্রমাণ করে দেন, জীবন নিয়ে জুয়া খেলতেও তিনি বিন্দুমাত্র পেছপা নন। আর আমাদের গল্পের জেমস বন্ডের অভিযানও শুরু হয়েছিলো ক্যাসিনো থেকে।

১৯৭৪ সালে দুস্কো পোপোভ একটি বই প্রকাশ করেন। বইটির নাম ছিলো ‘স্পাই-কাউন্টারস্পাই’। ঘটনার ঘনঘটা, মৃত্যু মুখে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতাসহ পোপোভের জীবনের অনেক রোমাঞ্চকর ঘটনা এই বইয়ে স্থান পেয়েছে। বন্ডের মতো পোপোভও বিপদের মুখে স্থির, অবিচল থাকতেন। পোপোভ লিখেছেন, “আমি শুনেছি আমার অভিজ্ঞতা ও জীবনের ওপর কিছু-কিছু ক্ষেত্রে ভিত্তি করে ইয়ান ফ্লেমিং জেমস বন্ড চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। জেমস বন্ড রক্তমাংসের মানুষ হলে গুপ্তচরবৃত্তির দুনিয়ায় ৪৮ঘন্টাও বেঁচে থাকতেন কিনা সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। এই পৃথিবীতে পদে-পদে মৃত্যু আর বিপদের হাতছানি।”

 এই রোমাঞ্চকর জনপ্রিয় চরিত্রে স্যঁ কোনারি, রজার মুর, পিয়ার্স ব্রোসনান, ডেনিয়েল ক্রেইগ সহ প্রমুখ অভিনেতা এই চরিত্রে অভিনয় করে মানুষের মন জয় করেছেন। আজও বিশ্বের রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের কাছে জেমস বন্ড অন্যতম প্রিয় একটি চরিত্র।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার গঠনমূলক মন্তব্য ও সমালোচনা আমার লেখনীকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে। দয়া করে অশালীন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।

Copyright © 2014 রিপন ঘোষের খেরোখাতা All Right Reserved
^
Blogger দ্বারা পরিচালিত.