স্কুল জীবনে যে জিনিসগুলো ভয় পেতাম তার
একটি হলো গ্রীষ্মের কড়া রোদে দাঁড়িয়ে এসেম্বলীতে অংশগ্রহন করা। এসেম্বলী
ফাঁকি দেয়ারও কোন সুযোগ ছিলোনা। স্যাররা ক্লাস থেকে খুঁজে খুঁজে ছাত্রদের বের করে আনতেন। তাই অনিচ্ছা
সত্ত্বেও সমাবেশে অংশ নিতে হতো।
তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। কড়া রোদে
এসেম্বলীতে দাঁড়িয়ে আছি। জাতীয় সংগীত চলাকালীন হঠাত চোখে অন্ধকার দেখলাম। কিছু বুঝে
ওঠার আগেই আমার সামনে দাঁড়ানো ছাত্রের গায়ে ঢলে পড়লাম। আমি মাথা
ঘুরিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম ঠিক কিন্তু অজ্ঞান হইনি। আমাদের
ক্লাসের সারির কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আমাদের ক্লাস টিচার শিশির (শিশির চন্দ্র
হাওলাদার) স্যার। আমাকে
পড়ে যেতে দেখে স্যার দৌড়ে এলেন। তারপর যে ঘটনা ঘটলো তা আমার জীবনে বাঁধিয়ে রাখার মতো একটা ঘটনা। স্যার আমাকে
কোলে তুলে নিয়ে অফিস রুমে চলে গেলেন। শিশির স্যারের পিছু পিছু আমার অন্যতম প্রিয় শিক্ষক প্রয়াত আবু
হেনা চৌধুরী স্যারও অফিস রুমে এলেন।
শিশির স্যার একটা শক্ত কাগজ নিয়ে আমার
মাথায় বাতাস করতে লাগলেন। আর বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, এখন কেমন
লাগছে?
আবু হেনা স্যার চিনি আর লবন দিয়ে নিজ
হাতে দ্রুত এক গ্লাস শরবত নিয়ে এলেন। তারপর একহাতে আমাকে শরবত খাইয়ে দিলেন, আরেক হাতে
মাথায় শান্তির পরশ বুলিয়ে দিলেন। শিশির স্যার তখনও বাতাস করে চলেছেন। শরবত খেয়ে
যখন একটু আরাম বোধ করছি তখন শিশির স্যার জিজ্ঞেস করলেন, আমি ক্লাস
করতে পারবো কিনা? আমি হ্যাঁ বা না বোধক কোন উত্তর দিলাম না। স্যার বললেন,
তাহলে
আজ আর ক্লাস করে লাভ নেই। চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।
অনেকক্ষণ থেকেই আমি ঘোরের মধ্যে আছি। স্কুলের
সবচাইতে জনপ্রিয় দু-দুজন স্যার আমাকে শুশ্রুষা করছেন, আদর করে
বাতাস করছেন, শরবত
খাওয়াচ্ছেন আমি নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমি স্যারকে
বললাম, না
স্যার ক্লাস করতে পারবো।
তখন আবু হেনা স্যার বললেন, ক্লাস করতে
না পারলে বলো। আমরা
কেউ একজন তোমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসবো।
ততোক্ষণে আমি অনেকটাই ধাতস্থ হয়ে উঠেছি। এখন আর
দূর্বল লাগছেনা। আমি
আবার বললাম, ক্লাস
করতে পারবো। স্যাররা
আর জোর করলেন না। শিশির
স্যার বললেন, বসো
আমি ক্লাসে যাওয়ার সময় আমার সাথে ক্লাসে যাবে।
আমার দুজন প্রিয় শিক্ষকের এই ভালোবাসা
আর মমত্ব আমি আমার জীবনেও ভুলতে পারবোনা। স্যারদের এই ভালোবাসা আমার পরম পাওয়া।
স্কুল ছেড়েছি নয় বছর হয়ে গেল। কিন্তু এখনও
ভুলতে পারিনা এরকম টুকরো টুকরো স্মৃতি। খুব বেশী মিস করি দি এইডেড হাই স্কুলের
আবু হেনা স্যার, শিশির স্যার, শামসুদ্দিন স্যার, হামিদুল হক
চৌধুরী স্যার, নীলোৎপল স্যার, সমীরণ স্যার, পিংকু স্যার,
শমসের
আলী স্যার সহ অন্যান্য স্যারদের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার গঠনমূলক মন্তব্য ও সমালোচনা আমার লেখনীকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে। দয়া করে অশালীন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।