আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে

Latest News:

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

কল্পনা নয় বাস্তবের শার্লক হোমস

জেমস বন্ডের মতো কালজয়ী আরেকটি গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমস। শত বছর ধরে পাঠক হৃদয়ে যার সপ্রতিভ অবস্থান। মজার ব্যাপার হচ্ছে জেমস বন্ডের মতো এই শার্লক হোমস চরিত্রও বাস্তবের এক ব্যক্তিকে অবলম্বন করে রূপায়িত। তবে চলুন এখন জানি, কে সেই বাস্তবের শার্লক হোমস!

১৮৮৬ সালের মার্চ মাস। প্লাইমাউথের বুশ ভিলাতে ডাক্তারির পাশাপাশি গোয়েন্দা কাহিনী লিখায় হাত দেন আর্থার কোনান ডয়েল। ১৮৮৭ সালে A Tangled Skin উপন্যাসের মাধ্যমে তিনি শার্লক হোমসের সৃষ্টি করেন। প্রথম দিকে শার্লকের নাম রাখা হয়েছিলো শেরিনফোর্ড হোমস। কিন্তু এই নাম পছন্দমতো না হওয়ায় বদলে রাখলেন শার্লক হোমস। সেই সাথে উপন্যাসের নাম বদলে রাখলেন ‘এ্যা স্টাডি ইন স্কারলেট’। একসময় ডাক্তারি পেশা ছেড়ে লেখালেখিতে পূর্ণ মনোনিবেশ করেন।

শিল্পীর চোখে শার্লক হোমস
 উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের নাম ঠিক হলো, কিন্তু তারপরও ডয়েল তীব্র উৎকন্ঠায় ভুগছেন। তার মনে শংকা ছিলো তিনি কি কাহিনীটাকে এগিয়ে নিতে পারবেন! তিনি এমন এক গোয়েন্দা চরিত্র সৃষ্টি করতে চান যা তখনকার জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র দুপ্যাঁকেও বুদ্ধিতে ছাড়িয়ে যায়। ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো ডক্টর বেলের কথা।

১৮৭০ সালে কোনান ডয়েল এডিনবরা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। সে সময় ডক্টর যোসেফ বেল এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও এডিনবরা মেডিক্যাল জার্নালের সম্পাদক। এডিনবরা গোলন্দাজ বাহিনীর তিনিই তখন উপদেষ্টা চিকিৎসক। কোনান ডয়েল নিজেই বলেছেন, “শার্লক হোমস চরিত্র সৃষ্টি করতে গিয়ে আমি বারবার তার কথাই ভাবছিলাম। আমার পুরনো শিক্ষক যোসেফ বেল। তাঁর ঈগল পাখির মতো চোখ-মুখ, কৌতূহলোদ্দীপক চলাফেরা, যেকোন ব্যাপারে তাঁর গভীর চিন্তাভাবনা, সমস্যা সমাধানের অদ্ভুত ক্ষমতা…এ সবই আমার বারবার মনে পড়ছিলো।”

এডিনবরা হাসপাতালের বহির্বিভাগে কোনান ডয়েল, ডক্টর বেলের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন, রোগীদের কেস হিস্ট্রি লিখতেন। তখন ডয়েল, বেলের ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে থেকে তার বিভিন্ন কর্মকান্ড স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন। একবার একজন রোগীকে দেখেই বেল বলে দিয়েছিলেন, “ভদ্রলোক হাইল্যান্ড রেজিমেন্টে একজন নন-কমিশনড অফিসার ছিলেন। বার্বাডোজে কিছুদিন কাটিয়ে এসেছেন।”

উপস্থিত হতভম্ব ছাত্রদের সামনে ডক্টর বেল ঘটনাটির ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন এভাবে, “ ভদ্রলোকের চেহারা, আচার-আচরণ বেশ সম্ভ্রান্ত কিন্তু উনি মাথা থেকে টুপি খোলেননি। সেনাবাহিনীর লোকেরা টুপি না খোলায় অভ্যস্ত। ভদ্রলোক নিশ্চয় কয়েকদিন আগে অবসর নিয়েছেন, তা না হলে তিনি এই সাধারণ ভব্যতায় অভ্যস্ত হতেন। ভদ্রলোক অন্যের উপর কর্তৃত্ব ফলাতে ভালোবাসেন, স্কটল্যান্ডের লোকের এ রকম অভ্যাস থাকে। ভদ্রলোকের গোদ রোগ হয়েছে, ওটা ওয়েষ্ট ইন্ডিজের রোগ, ব্রিটেনের নয়। ভদ্রলোক যে বার্বাডোজে ছিলেন, এটাই তার সবচেয়ে বড়প্রমাণ।”

 উপরের ব্যাখ্যা থেকেই বুঝা যায় ডক্টর বেল কতোটা তীক্ষ বুদ্ধির অধিকারী ছিলেন। আর তার সেই বুদ্ধিমত্তায় বেশী আকৃষ্ট হয়েছিলেন কোনান ডয়েল। তাইতো শার্লক হোমস চরিত্র অলংকরণ করতে গিয়ে বারবার বেলের কথা মনে হয়েছে তার। ১৮৯২ সালের ৪মে কোনান ডয়েল এক চিঠিতে ডক্টর বেলকে লিখেছিলেন, “এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, আপনাকে দেখেই আমি শার্লক হোমস এর চরিত্র সৃষ্টি করেছি। শার্লক হোমসের বিশ্লেষণী ক্ষমতা কোনও বানানো অতিরঞ্জিত ব্যাপার নয়। এডিনবরা হাসপাতালের বহির্বিভাগে আমি নিজে আপনাকে ওই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেখেছি।”

ছাত্রের এ গুরুদক্ষিণায় ডক্টর বেল অবশ্যই খুশি হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি নিজে শার্লক হোমসের উৎস সম্বন্ধে অন্য ধারণা পোষণ করতেন। এক চিঠিতে তিনি ডয়েলকে লিখেছিলেন, “আমারতো মনে হয় তুমিই শার্লক হোমস। আর তুমি সেটা ভালো করেই জানো।”

আর্থার কোনান ডয়েল, শার্লক হোমসকে নিয়ে চারটি উপন্যাস ও ছাপ্পান্নটি ছোটোগল্প লিখেছেন। ১ম কাহিনী ‘এ স্টাডি ইন স্কারলেট’ ১৮৮৭ সালে প্রকাশিত হয়। ২য় কাহিনী ‘দ্য সাইন অব দা ফোর’ ১৮৯০ সালে প্রকাশিত হয়। ১৮৯১ সালে দ্য স্ট্যান্ড ম্যাগাজিন পত্রিকায় প্রথম ছোটগল্পের সিরিজটি প্রকাশিত হওয়ার পরই শার্লক হোমস চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯২৭ সাল পর্যন্ত হোমসকে নিয়ে একগুচ্ছ ছোটগল্পের সিরিজ ও আরও দুটি ধারাবাহিক উপন্যাস প্রকাশিত হয়। হোমস কাহিনীর পটভূমির সময়কাল ১৮৮০ থেকে ১৯০৭ সাল। শেষ ঘটনাটির সময়কাল অবশ্য ১৯১৪।

আর্থার কোনান ডোয়েল
 শার্লক হোমস চরিত্র এতোটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো যে দিনদিন এর নতুন কাহিনীর পাঠক চাহিদা বেড়েই চলেছিলো। এক চরিত্রকে নিয়ে বারবার লিখতে লিখতে কোনান ডয়েল বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাছাড়া গোয়েন্দা কাহিনী লিখতে গেলে প্রয়োজন গভীর চিন্তাভাবনার। তাই শেষদিকে তিনি শার্লক হোমসকে নিয়ে লেখা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাঠক চাহিদার কাছে তিনি হার মেনেছিলেন। কোনান ডয়েলের মৃত্যুর পরও শার্লক হোমসকে নিয়ে অনেক কাহিনী লিখা হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ভাষায় নির্মিত হয়েছে অজস্র চলচিত্র।

আজও বিশ্বের রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের কাছে শার্লক হোমস সত্যিকারের এক জীবন্ত চরিত্র। শার্লক হোমস যে একটা কাল্পনিক চরিত্র, একথা আজও অনেকেই বিশ্বাস করতে চাননা। এখনও তার নামে ২২১/বি, বেকার স্ট্রিটের ঠিকানায় সপ্তাহে গড়ে ৫০-৬০ খানা চিঠি আসে । গল্পের চিঠিগুলোর উত্তর দিতেন তার সহকারী বন্ধু ওয়াটসন। কিন্তু এখন ওয়াটসন না থাকলেও উত্তর দেওয়া হয় ‘হোমস সোসাইটি’ এর পক্ষ থেকে । সবাইকে জানানো হয়, আমরা দুঃখিত! শার্লক হোমস এখন গোয়েন্দাগিরি করছেন না, তিনি তার পেশা ছেড়ে মৌমাছি পালনে ব্যস্ত। সত্যিই এ এক অদ্ভুত ব্যাপার।

কি পাঠাবেন নাকি আপনিও একটি চিঠি! বলা যায়না গল্পের শার্লক হোমস বাস্তবে উত্তর দিয়ে দিতে পারেন!!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার গঠনমূলক মন্তব্য ও সমালোচনা আমার লেখনীকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে। দয়া করে অশালীন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।

Copyright © 2014 রিপন ঘোষের খেরোখাতা All Right Reserved
^
Blogger দ্বারা পরিচালিত.